Monday, May 13, 2013


“মসজিদের আদব-কায়দা ও সম্মান এবং আমাদের করনীয়”

Salat Prayerআ স ম আহসান উল্লাহ আব্দুল্লাহ: মসজিদ হলো পৃথিবীর বুকে মহান আল্লাহর পবিত্র ঘর। ইসলাম ও মুসলমানদের দৈনন্দিন ইবাদতের সর্বোচ্ছ  পবিত্র স্থান এই মসজিদ। এর পবিত্র রক্ষা করা প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরয।

মসজিদের পবিত্রতা রক্ষা করার গুরুত্ত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে, হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন-নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি মসজিদ থেকে নাপাকি নোংরামি ও পীড়াদায়ক বস্তু অপসারন করে, আল্লাহ্‌ তায়ালা তার জন্য বেহেস্তে ঘর তৈরী করে দিবেন, (সুবহান আল্লাহ্)।

প্রত্যেকটি মসজিদ খানায়ে কাবার প্রতিচ্ছবি, তাই এ প্রসংগে আমাদের প্রিয় নবী হাদিস শরিফে উল্লেখ করেছেন- মহান আল্লাহ’র নিকট সর্বাধিক প্রিয় ও পছন্দনীয় স্থান হলো মসজিদ। হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হইতে বর্নিত – নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- যে ব্যক্তি আল্লাহ’র সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে চায় সে যেন আমাকে ভালোবাসে, যে আমার সাথে মহব্বৎ রাখতে চায় সে যেনো আমার সাহাবাদেরকে ভালোবাসে, যে আমার সাহাবাদেরকে ভালবাসতে চায় সে যেনো কোরআনকে ভালোবাসে, যে কোরআনকে ভালবাসতে চায় সে যেনো মসজিদেকে মহব্বৎ করে। কেননা মসজিদ আল্লাহ’র ঘর।

হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা হইতে বর্নিত- হাদিসে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন- তোমরা যখন বেহেস্তের বাগানে ভ্রমন করবে তখন সেখান থেকে বাগানের ফল ভক্ষন করবে। নবীজির নিকট একজন সাহাবা জানতে চাইলেন- ইয়া রাসুলাল্লাহ – পৃথিবীতে বেহেস্তের বাগান কি ? জবাবে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন সেটা হলো- “মসজিদ”। সাহাবা রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আবার জানতে চাইলেন- ইয়া রাসুলাল্লাহ তাহলে ফল ভক্ষন করা মানে কি ? জবাবে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন- “সুবহানাল্লাহু ওয়াল হামদুলিল্লাহ ওয়া লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবর” এই তাসবীহ পাঠ করা।

মসজিদের নিয়ম কানুন যথাযথভাবে পালনকারীদের জন্য মহান প্রতিপালকের পক্ষ থেকে রয়েছে মহা পুরস্কার। সাইয়েদুনা হযরত আবু যর গিফারী রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন আমাকে সম্বোধন করে সরকারে দু’জাহান সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- হে আবু যর ! তুমি যতক্ষন পর্যন্ত মসজিদে বসে থাকবে এবং সেখানে যতগুলো শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ করবে, প্রতিটি শ্বাস-প্রশ্বাসের পরিবর্তে আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামিন তোমাকে জান্নাতে এক একটি মর্যাদা দান করবেন, ফেরেস্তাগন তোমার গুনা মাফের জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া করতে থাকবে এবং প্রতিটি শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামিন তোমার দশটি গুনাহ কে মাফ করে দিবেন।

মসজিদের অনেক গুলো আদব কায়দা রয়েছে সে গুলো একজন ইমানদার মুসলমান হিসাবে আমাদের সবাইকে মেনে চলা একান্ত দায়িত্ব, তাই আগে আমরা মসজিদের আদব-কায়দাগুলো জানা দরকার-

Ø  ইতিকাফের নিয়াত ছাড়া মসজিদে কোন কিছু খাওয়া নিষেধ।

Ø  অজু করার পর নামাজির অজুর এক ফোটা পানিও যাতে মসজিদে না পড়ে সে দিগে খেয়াল রাখা।

Ø  মসজিদে দৌড়া-দৌড়ি করা বা জোরে জোরে হাঁটাহাঁটি না করা।

Ø  মসজিদে অবস্থানরত কোন মুসল্লি, মসজিদের বাহিরের কারো সাথে উচ্ছস্বরে কথা না বলা বা বাহিরের কোন ব্যক্তির ডাকে উচ্ছস্বরে জবাব না দেওয়া।

Ø  মসজিদে কোন মুসল্লি তার হাতের লাঠি, তাসবীহ, ছাতা, ইত্যাদি জোরে নিক্ষেপ না করা বা না রাখা।

Ø  মসজিদে পা টেনে  না বসা বা হাটুতে মাথা গুজে না বসা। শিশু এবং পাগল কোন ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ  না করানো।

Ø  মসজিদের ভিতর সামাজিক কোন কারনেই চিৎকার না দেওয়া বা হট্রগোল না করা।

Ø  মসজিদের ভিতর কোন বিধর্মি যাতে প্রবেশ করতে না পারে সে দিকে খেয়াল রাখা।

Ø  ইমাম সাহেবের যুগোপযোগি ইসলামী বক্তব্য মনযোগ দিয়ে শুনা।

Ø  মসজিদের প্রবেশের সময় বা বাহির হওয়ার সময় ধাক্কা-ধাক্কি না করা।

Ø  মসজিদের সামনের কাতারে বসার জন্য তারাতারি করতে গিয়ে পিছনে যারা বসে আছে তাদের কাঁদের উপর দিয়ে পা তুলে যাতায়াত না করা, ইত্যাদি নিয়ম গুলো মসজিদের আদব রক্ষার জন্য খুবই জরুরী।

মসজিদের ভিতরে কথা বলাকে নিষেধ করতে গিয়ে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, যদি কোন ব্যক্তি মসজিদে দুনিয়াবি কথা বলে, তবে ওই ব্যক্তির চল্লিশ বছরের আমল বরবাদ হয়ে যাবে। আরেক জায়গায় রাসুল সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- মসজিদে যদি কেউ দুনিয়াবি কথা বলে, তার ওই কথা গুলো তার ভালো আমলকে এমন ভাবে খেয়ে ফেলে, যেমন চতুষ্পদ প্রানী ঘাষ খেয়ে ফেলে।

মসজিদের ভিতরে কথা বলতে নিষেধ করতে গিয়ে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন- যখন কোন ব্যক্তি মসজিদে কথা শুরু করে তখন রহমতের ফেরেস্তাগন ডাক দিয়ে বলেন- হে আল্লাহ’র বন্ধু তুমি চুপ হয়ে যাও, তারপর যদি ওই ব্যক্তি চুপ না হয়, ফেরেস্তাগন কিছুক্ষন পর আবার ডাক দিয়ে বলেন- হে আল্লাহ’র শত্রু তুমি চুপ কর, এরপরও যদি ওই ব্যক্তি চুপ না করে তাহলে ওই ফেরেস্তা এবার বলে- তোমার উপর আল্লাহর অভিশাপ তুমি চুপ কর।

No comments:

Post a Comment