Monday, May 13, 2013


নবীপ্রেমিক ইমাম মালেক (রহ.)

moladunnobie-sm220130124145924মাওলানা ইয়াহইয়া মাহমূদ: নবীর আশেকের নিদর্শন ছিলেন ইমাম মালেক (রহ.)। একবার হাদিসের দরস দিচ্ছিলেন তিনি। দরসের মাঝে-মধ্যে তার চেহারা লাল হয়ে যেত। মনে হচ্ছিল বিষাক্ত কিছু তাকে বার বার দংশন করছে। দরস শেষে এক ছাত্রকে পিঠে কিসে কামড়াচ্ছে দেখতে বললেন। জামা সরিয়ে ছাত্র দেখল একটা বিষাক্ত বিচ্ছু অনবরত কামড়াচ্ছে আর রক্ত চুষে নিচ্ছে। বিচ্ছুর কামড়েই তিনি বার বার চেহারা বিকৃত করছিলেন। ছাত্ররা জিজ্ঞেস করলেন, এতক্ষণ কেন বলেননি তিনি? উত্তরে বললেন, বিচ্ছুর দংশনে আমি মরে গেলেও কিছু বলতাম না এবং দরস ছেড়ে উঠতামও না। কারণ আমার সামনে নবীর হাদিস। নড়াচড়া করলে হাদিসের প্রতি অবজ্ঞা হবে, আর তা হবে নবীর সঙ্গে চরম বেয়াদবি।

ইমাম মালেক বসবাস করতেন নবীর শহর মদিনায়। কোনো দিন সে শহরে প্রস্রাব-পায়খানা করতেন না তিনি। কারণ ওখানে শুয়ে আছেন নবী করিম (সা.)। আবার মদিনার বাইরেও যেতেন না। কারণ তখন মৃত্যু হলেও তা যে হবে মদিনার বাইরে! তাই প্রস্রাব-পায়খানার বেগ হলে তিনি চলে যেতেন সীমান্তে। এক পা মদিনায় আরেক পা মদিনার বাইরে রেখে হাজত সারতেন। ওই অবস্থায় মৃত্যু হলে তা যেন হয় মদিনায়।

যে ভূমিতে শুয়ে আছেন প্রিয় নবী (সা.) সে ভূমিতেই যেন তাঁরও সমাধি হয়, সে জন্য তিনি কখনো মদিনার বাইরে যেতেন না। শেষ বয়সে আরও একবার হজ করার খুব ইচ্ছা হলো তাঁর। কিন্তু হজ করতে গিয়ে যদি মারা যান, তাহলে তো নবীর শহর মদিনায় শোয়া হবে না। কারণ বিনা কারণে তিন মাইলের বেশি দূরে লাশ স্থানান্তর করা মাকরুহ। তাই হয়তো মক্কাতেই শোতে হবে নয়তো সুন্নাতের খেলাফ করে মদিনায় লাশ আনতে হবে। কোনোটাই করার অনুমতি দিতে রাজি নন তিনি। তাই আর কতদিন বাঁচবেন জানার খুব ইচ্ছা হলো। আল্লাহর কাছে দোয়া করলেন যেন জানিয়ে দেন তাঁর বাকি হায়াতের কথা। সত্যি সত্যিই একরাতে স্বপ্ন দেখলেন নবী (সা.) এসে তাঁকে হাতের পাঁচ আঙ্গুল দেখিয়ে চলে গেলেন। ঘুম থেকে উঠে খুব খুশি হলেন তিনি পাঁচ সংখ্যা জানতে পেরে। কিন্তু পরক্ষণেই আবার চিন্তায় পড়ে গেলেন, পাঁচ সংখ্যার দ্বারা নবী (সা.) কি বোঝালেন। পাঁচ বছর, না মাস, না সপ্তাহ, নাকি দিন? কোনোটাই তো স্পষ্ট নয়। পাঁচের দ্বারা যদি উদ্দেশ্য হয় দিন, তাহলে তো হজ করে আসা সম্ভব হবে না। তাই পাঁচের ব্যাখ্যা জানতে তিনি এবার রীতিমতো কৌতূহলী হয়ে উঠলেন।

সে যুগে স্বপ্নের নির্ভুল তাবির করতেন আল্লামা ইবনে সিরীন (রহ.)। তার কাছে তাবির জানতে লোক পাঠালেন। ইবনে সিরীন স্বপ্নের ব্যাখ্যায় বললেন, আল্লাহপাক পাঁচটি বিষয়ের জ্ঞান কাউকে দেননি। তিনি হয়তো সে পাঁচ বিষয়ের কোনো একটি জানতে চেয়েছিলেন। সেটা যে জানা সম্ভব না সেদিকেই ইঙ্গিত দিলেন নবী (সা.)। নবী ও নবীর শহর মদিনাপ্রেমিক ইমাম মালেকের (রহ.) মতো আরও অনেক আল্লাহপ্রেমিক ব্যক্তি রয়েছেন। আল্লাহপাক আমাদের প্রকৃত নবীপ্রেমিক বানিয়ে দিন। আমীন।

লেখক : খতিব, বায়তুল মারুফ জামে মসজিদ, টিভি রোড, রামপুরা, ঢাকা।

No comments:

Post a Comment