কুমিল্লায় অবৈধ হজ্ব এজেন্সির ছড়াছড়ি: হজ্বযাত্রী সংগ্রহে দালাল নিয়োগ
- Sunday, 05 May 2013 06:59
তারা যেমন সরাসরি হজ্ব গমনেচ্ছুদের কাছে ধরনা দিচ্ছে তেমনি স্থানীয় ইমাম-মুয়াজ্জিন এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মাধ্যমে এ কাজ করছে। অনেক এলাকায় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘হজ কাফেলা’ নাম দিয়ে বড় বড় ব্যানার টাঙিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছে। তাদের দৌরাত্ম্যের সরকারী অনুমোদিত এজেন্সিগুলোও অসহায়।
এক দিকে যেমন সরকারি ব্যবস্থাপনার হজ্বযাত্রী প্রতি বছরই কমে যাচ্ছে, তেমনি বেসরকারি এজেন্সিগুলো ঘোষিত প্যাকেজ মূল্য থেকে অনেক কমে হজ্বযাত্রী পাঠানোর কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে। ফলে হাজ্বীরা যথাযথ সেবা থেকে যেমন বঞ্চিত হচ্ছেন তেমনি যাতায়াত, থাকা খাওয়াসহ সব ক্ষেত্রেই বিভিন্ন ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
হজ্বমেলার মাধ্যমে সচেতনতা সৃষ্টি, এজেন্সির একাউন্টে সরাসরি টাকা জমার নিয়ম এবং পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে সতর্ক করার মতো পদক্ষেপগুলোও কাজে আসছে না। দালালদের দৌরাত্ম্য বৃদ্ধির কথা স্বীকার করে হজ এজেন্সি সমূহের সংগঠন এ নিয়ে উদ্বিগ্ন।
জানা যায়- কুমিল্লায় সরকারী অনুমোদনহীন লাইসেন্স নেই এমন এজেন্সি রয়েছে ২৫টি এবং অনুমোদন ও স্থায়ীভাবে রয়েছে ২টি এজেন্সি। চলতি বছরের হজের টাকা জমার সরকার নির্ধারিত সময় ২৫ জুন। তবে সরকারী অনুমোদনহীন এজেন্সিগুলো ২০ জুনের মধ্যে টাকা জমার সর্বশেষ সময় নির্ধারণ করেছে। তাদের হজ্বযাত্রীদের নামের অনুকূলে টাকা জমার ব্যাংক বিবরণসহ তালিকা ২৫ জুনের মধ্যে জমা দিতে হবে।
কুমিল্লায় প্রায় ১০/১৫টি হজ্ব ট্রাভেলস এজেন্সি কার্যালয় রয়েছে। এসব কার্যালয় ছাড়াও বিভিন্ন মসজিদের ইমাম, মোয়াজ্জিমসহ বিভিন্ন দালালদের মাধ্যমে হজ্বযাত্রী বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে তাদেরকে এজেন্সির কাছে নিয়ে আসা হয়। তাদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দেখানো। দালালের অর্থসহ প্রায় অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে হজ্ব এজেন্সিগুলো। দালালরা তারা নিজ নিজ এলাকায় হজ্বযাত্রী সংগ্রহের পাশাপাশি আগেভাগেই এজেন্সির সাথে কথা বলে রাখছে।
অনেক দালালকে এজেন্সির সাথে দরকষাকষি করতে গিয়ে হজ্বযাত্রীদের বিভ্রান্তির মধ্যে ফেলে দিচ্ছে। একেক দালাল একেক সংখ্যক হজ্বযাত্রীর ব্যাপারে কথা বলছে। কুমিল্লার প্রতিটি হজ্ব ট্রাভেলস এজেন্সির নিয়োজিত রয়েছে প্রায় ১০ জন থেকে শুরু করে ১০০ জন হজ্বযাত্রী সংগ্রহকারী দালাল।
সূত্র জানায়, কুমিল্লায় বেশ কয়েকবার দালালদের একটি তালিকা আগে করা হয়েছিল। তবে নতুন তালিকায় ১’শ জনের মতো দালালের নাম স্থান পেয়েছে।
তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ ধরনের দালাল মধ্যস্বত্বভোগীদের সংখ্যা ২’শ ছাড়িয়ে যাবে। হজ্বযাত্রী সংগ্রহের কাজটি অতি লাভজনক হওয়ায় মাদরাসা শিক্ষক, ইমাম মুয়াজ্জিনের প্রতি ঝুঁকে পড়েছেন। তারা নিজ নিজ মসজিদ বা প্রতিষ্ঠান ও তার আশপাশের লোকদের নিয়ে হজের গ্র“প করছেন। এতে এক দিকে নিজে যেমন বিনা পয়সায় হজ্ব করছেন, অন্য দিকে প্রতি মওসুমেই বড় অঙ্কের টাকার মালিক হচ্ছেন, যা তার সম্মানী বা বেতনভাতা বাবদ প্রাপ্ত টাকার চেয়ে অনেক বেশি।
এ ধরনের লোকদের সঙ্গী হয়ে হজে গমনকারীরা ‘হজ্বের কাজ কষ্টের এবং এ কাজে ধৈর্য ধারণ করতে হয়’ ধরনের কথা শুনতে শুনতেই হজে যান। ফলে তাদের শত কষ্ট ও আর ভোগান্তির শিকার হয়েও কোনো কথা বলা বা অভিযোগ করার মতো মানসিকতা থাকে না। নিজেরা যে প্রকৃত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তাও অনেকে বুঝতে পারেন না।
হজযাত্রীদের দালালমুক্ত করার লক্ষ্যে এবার থেকে প্রত্যেক অ্যাজেন্সির একাউন্টে হাজীদের সরাসরি টাকা দেয়ার নিয়ম চালু করলেও তাও কাজে আসছে না। এটি কে কেউ আমলেই নিচ্ছে না। কারণ এটি কোনো বাধাই নয়। অ্যাজেন্সি মালিকেরা হজযাত্রীর নাম ঠিকানা পেলেই হলো, ওই নামে পুরো অঙ্কের টাকা নিজেরাই জমা দিচ্ছেন। কারণ নিজের অ্যাকাউন্টেই টাকা জমা দিচ্ছে। আর দালালদের কাছ থেকে নেয়া টাকার হিসাব থাকছে আলাদা।
আল তাওয়াফ ট্রূরস এন্ড ট্রাভেলস মালিক পেয়ার আহমেদ কুমিল্লার বার্তা ডট কমকে জানান- দালালদের দৌরাত্ম্যে হজ্ব কার্যক্রম চালানো কঠিন হচ্ছে। কারণ দালাল থেকে হাজ্বী না নিলে হজ্বযাত্রীই পাচ্ছে না কেউ। সরাসরি হজযাত্রী ২০ থেকে ৫০ জনের বেশি হচ্ছেন না। এ অবস্থায় বাধ্য হয়েই প্যাকেজমূল্য থেকে অনেক কমে দালালদের থেকে বুকিং নিতে হচ্ছে।
তিনি জানান, কুমিল্লা মাছ বাজারের ন্যায় সরকারী অনুমোদনহীন অহরহ এজেন্সি রয়েছে। রাজগঞ্জ বেশ কয়েকটি এজেন্সি হজ্ব যাত্রী নেওয়ার নামে সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে দালালদের মাধ্যমে হাজ্বীদের নিয়ে আসা হয়। তিনি আরও বলেন- সাবুরিয়া, বন্ধন, হাবিব ও ট্রাস্টসহ প্রায় ২৫টি হজ্ব এজেন্সির অনুমোদন নেই। সরকারীভাবে সর্বনিম্ন প্যাকেজমূল্য তিন লাখ তিন হাজার ৪৪০ টাকা। কুমিল্লায় কতিপয় এজেন্সি হাজীদের সরকারী নির্ধারিত ফি থেকে অনেক প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার টাকার মধ্যে হজ্ব করার প্রলোভন দেখিয়ে তাদেরকে আকৃষ্ট করছে।
কুমিল্লা আনাস ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরস এর বিরুদ্ধে দালালদের মাধ্যমে হজ্বযাত্রীদের প্রলোভন দেখিয়ে তাদের আকৃষ্ট করার অভিযোগ রয়েছে। তবে অভিযোগটি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকার আলহাজ্ব মনির হোসাইন পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন। প্যাকেজে ঘোষিত কমমূল্যে হাজী নেয়ার সুযোগ নেই। যদি প্রমাণ পাওয়া যায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি বলেন, গ্র“পের মাধ্যমে কোন হজ্বযাত্রীদের নেওয়া হচ্ছে না। যারা স্বইচ্ছায় সরাসরি এজেন্স কার্যালয়ে আসবেন তাদেরকেই হজ্ব করানো হচ্ছে। তবে কোন দালালদের মাধ্যমে কোন হজ্বযাত্রী আমাদের এখানে নেই।
No comments:
Post a Comment