Monday, May 13, 2013


“মসজিদের আদব-কায়দা ও সম্মান এবং আমাদের করনীয়”

Salat Prayerআ স ম আহসান উল্লাহ আব্দুল্লাহ: মসজিদ হলো পৃথিবীর বুকে মহান আল্লাহর পবিত্র ঘর। ইসলাম ও মুসলমানদের দৈনন্দিন ইবাদতের সর্বোচ্ছ  পবিত্র স্থান এই মসজিদ। এর পবিত্র রক্ষা করা প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরয।

মসজিদের পবিত্রতা রক্ষা করার গুরুত্ত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে, হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন-নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি মসজিদ থেকে নাপাকি নোংরামি ও পীড়াদায়ক বস্তু অপসারন করে, আল্লাহ্‌ তায়ালা তার জন্য বেহেস্তে ঘর তৈরী করে দিবেন, (সুবহান আল্লাহ্)।

প্রত্যেকটি মসজিদ খানায়ে কাবার প্রতিচ্ছবি, তাই এ প্রসংগে আমাদের প্রিয় নবী হাদিস শরিফে উল্লেখ করেছেন- মহান আল্লাহ’র নিকট সর্বাধিক প্রিয় ও পছন্দনীয় স্থান হলো মসজিদ। হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হইতে বর্নিত – নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- যে ব্যক্তি আল্লাহ’র সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে চায় সে যেন আমাকে ভালোবাসে, যে আমার সাথে মহব্বৎ রাখতে চায় সে যেনো আমার সাহাবাদেরকে ভালোবাসে, যে আমার সাহাবাদেরকে ভালবাসতে চায় সে যেনো কোরআনকে ভালোবাসে, যে কোরআনকে ভালবাসতে চায় সে যেনো মসজিদেকে মহব্বৎ করে। কেননা মসজিদ আল্লাহ’র ঘর।

হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা হইতে বর্নিত- হাদিসে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন- তোমরা যখন বেহেস্তের বাগানে ভ্রমন করবে তখন সেখান থেকে বাগানের ফল ভক্ষন করবে। নবীজির নিকট একজন সাহাবা জানতে চাইলেন- ইয়া রাসুলাল্লাহ – পৃথিবীতে বেহেস্তের বাগান কি ? জবাবে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন সেটা হলো- “মসজিদ”। সাহাবা রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আবার জানতে চাইলেন- ইয়া রাসুলাল্লাহ তাহলে ফল ভক্ষন করা মানে কি ? জবাবে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন- “সুবহানাল্লাহু ওয়াল হামদুলিল্লাহ ওয়া লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবর” এই তাসবীহ পাঠ করা।

মসজিদের নিয়ম কানুন যথাযথভাবে পালনকারীদের জন্য মহান প্রতিপালকের পক্ষ থেকে রয়েছে মহা পুরস্কার। সাইয়েদুনা হযরত আবু যর গিফারী রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন আমাকে সম্বোধন করে সরকারে দু’জাহান সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- হে আবু যর ! তুমি যতক্ষন পর্যন্ত মসজিদে বসে থাকবে এবং সেখানে যতগুলো শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ করবে, প্রতিটি শ্বাস-প্রশ্বাসের পরিবর্তে আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামিন তোমাকে জান্নাতে এক একটি মর্যাদা দান করবেন, ফেরেস্তাগন তোমার গুনা মাফের জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া করতে থাকবে এবং প্রতিটি শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামিন তোমার দশটি গুনাহ কে মাফ করে দিবেন।

মসজিদের অনেক গুলো আদব কায়দা রয়েছে সে গুলো একজন ইমানদার মুসলমান হিসাবে আমাদের সবাইকে মেনে চলা একান্ত দায়িত্ব, তাই আগে আমরা মসজিদের আদব-কায়দাগুলো জানা দরকার-

Ø  ইতিকাফের নিয়াত ছাড়া মসজিদে কোন কিছু খাওয়া নিষেধ।

Ø  অজু করার পর নামাজির অজুর এক ফোটা পানিও যাতে মসজিদে না পড়ে সে দিগে খেয়াল রাখা।

Ø  মসজিদে দৌড়া-দৌড়ি করা বা জোরে জোরে হাঁটাহাঁটি না করা।

Ø  মসজিদে অবস্থানরত কোন মুসল্লি, মসজিদের বাহিরের কারো সাথে উচ্ছস্বরে কথা না বলা বা বাহিরের কোন ব্যক্তির ডাকে উচ্ছস্বরে জবাব না দেওয়া।

Ø  মসজিদে কোন মুসল্লি তার হাতের লাঠি, তাসবীহ, ছাতা, ইত্যাদি জোরে নিক্ষেপ না করা বা না রাখা।

Ø  মসজিদে পা টেনে  না বসা বা হাটুতে মাথা গুজে না বসা। শিশু এবং পাগল কোন ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ  না করানো।

Ø  মসজিদের ভিতর সামাজিক কোন কারনেই চিৎকার না দেওয়া বা হট্রগোল না করা।

Ø  মসজিদের ভিতর কোন বিধর্মি যাতে প্রবেশ করতে না পারে সে দিকে খেয়াল রাখা।

Ø  ইমাম সাহেবের যুগোপযোগি ইসলামী বক্তব্য মনযোগ দিয়ে শুনা।

Ø  মসজিদের প্রবেশের সময় বা বাহির হওয়ার সময় ধাক্কা-ধাক্কি না করা।

Ø  মসজিদের সামনের কাতারে বসার জন্য তারাতারি করতে গিয়ে পিছনে যারা বসে আছে তাদের কাঁদের উপর দিয়ে পা তুলে যাতায়াত না করা, ইত্যাদি নিয়ম গুলো মসজিদের আদব রক্ষার জন্য খুবই জরুরী।

মসজিদের ভিতরে কথা বলাকে নিষেধ করতে গিয়ে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, যদি কোন ব্যক্তি মসজিদে দুনিয়াবি কথা বলে, তবে ওই ব্যক্তির চল্লিশ বছরের আমল বরবাদ হয়ে যাবে। আরেক জায়গায় রাসুল সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- মসজিদে যদি কেউ দুনিয়াবি কথা বলে, তার ওই কথা গুলো তার ভালো আমলকে এমন ভাবে খেয়ে ফেলে, যেমন চতুষ্পদ প্রানী ঘাষ খেয়ে ফেলে।

মসজিদের ভিতরে কথা বলতে নিষেধ করতে গিয়ে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন- যখন কোন ব্যক্তি মসজিদে কথা শুরু করে তখন রহমতের ফেরেস্তাগন ডাক দিয়ে বলেন- হে আল্লাহ’র বন্ধু তুমি চুপ হয়ে যাও, তারপর যদি ওই ব্যক্তি চুপ না হয়, ফেরেস্তাগন কিছুক্ষন পর আবার ডাক দিয়ে বলেন- হে আল্লাহ’র শত্রু তুমি চুপ কর, এরপরও যদি ওই ব্যক্তি চুপ না করে তাহলে ওই ফেরেস্তা এবার বলে- তোমার উপর আল্লাহর অভিশাপ তুমি চুপ কর।

“মসজিদের আদব-কায়দা ও সম্মান এবং আমাদের করনীয়”

Salat Prayerআ স ম আহসান উল্লাহ আব্দুল্লাহ: মসজিদ হলো পৃথিবীর বুকে মহান আল্লাহর পবিত্র ঘর। ইসলাম ও মুসলমানদের দৈনন্দিন ইবাদতের সর্বোচ্ছ  পবিত্র স্থান এই মসজিদ। এর পবিত্র রক্ষা করা প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরয।

মসজিদের পবিত্রতা রক্ষা করার গুরুত্ত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে, হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন-নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি মসজিদ থেকে নাপাকি নোংরামি ও পীড়াদায়ক বস্তু অপসারন করে, আল্লাহ্‌ তায়ালা তার জন্য বেহেস্তে ঘর তৈরী করে দিবেন, (সুবহান আল্লাহ্)।

প্রত্যেকটি মসজিদ খানায়ে কাবার প্রতিচ্ছবি, তাই এ প্রসংগে আমাদের প্রিয় নবী হাদিস শরিফে উল্লেখ করেছেন- মহান আল্লাহ’র নিকট সর্বাধিক প্রিয় ও পছন্দনীয় স্থান হলো মসজিদ। হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হইতে বর্নিত – নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- যে ব্যক্তি আল্লাহ’র সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে চায় সে যেন আমাকে ভালোবাসে, যে আমার সাথে মহব্বৎ রাখতে চায় সে যেনো আমার সাহাবাদেরকে ভালোবাসে, যে আমার সাহাবাদেরকে ভালবাসতে চায় সে যেনো কোরআনকে ভালোবাসে, যে কোরআনকে ভালবাসতে চায় সে যেনো মসজিদেকে মহব্বৎ করে। কেননা মসজিদ আল্লাহ’র ঘর।

হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা হইতে বর্নিত- হাদিসে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন- তোমরা যখন বেহেস্তের বাগানে ভ্রমন করবে তখন সেখান থেকে বাগানের ফল ভক্ষন করবে। নবীজির নিকট একজন সাহাবা জানতে চাইলেন- ইয়া রাসুলাল্লাহ – পৃথিবীতে বেহেস্তের বাগান কি ? জবাবে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন সেটা হলো- “মসজিদ”। সাহাবা রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আবার জানতে চাইলেন- ইয়া রাসুলাল্লাহ তাহলে ফল ভক্ষন করা মানে কি ? জবাবে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন- “সুবহানাল্লাহু ওয়াল হামদুলিল্লাহ ওয়া লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবর” এই তাসবীহ পাঠ করা।

মসজিদের নিয়ম কানুন যথাযথভাবে পালনকারীদের জন্য মহান প্রতিপালকের পক্ষ থেকে রয়েছে মহা পুরস্কার। সাইয়েদুনা হযরত আবু যর গিফারী রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন আমাকে সম্বোধন করে সরকারে দু’জাহান সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- হে আবু যর ! তুমি যতক্ষন পর্যন্ত মসজিদে বসে থাকবে এবং সেখানে যতগুলো শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ করবে, প্রতিটি শ্বাস-প্রশ্বাসের পরিবর্তে আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামিন তোমাকে জান্নাতে এক একটি মর্যাদা দান করবেন, ফেরেস্তাগন তোমার গুনা মাফের জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া করতে থাকবে এবং প্রতিটি শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামিন তোমার দশটি গুনাহ কে মাফ করে দিবেন।

মসজিদের অনেক গুলো আদব কায়দা রয়েছে সে গুলো একজন ইমানদার মুসলমান হিসাবে আমাদের সবাইকে মেনে চলা একান্ত দায়িত্ব, তাই আগে আমরা মসজিদের আদব-কায়দাগুলো জানা দরকার-

Ø  ইতিকাফের নিয়াত ছাড়া মসজিদে কোন কিছু খাওয়া নিষেধ।

Ø  অজু করার পর নামাজির অজুর এক ফোটা পানিও যাতে মসজিদে না পড়ে সে দিগে খেয়াল রাখা।

Ø  মসজিদে দৌড়া-দৌড়ি করা বা জোরে জোরে হাঁটাহাঁটি না করা।

Ø  মসজিদে অবস্থানরত কোন মুসল্লি, মসজিদের বাহিরের কারো সাথে উচ্ছস্বরে কথা না বলা বা বাহিরের কোন ব্যক্তির ডাকে উচ্ছস্বরে জবাব না দেওয়া।

Ø  মসজিদে কোন মুসল্লি তার হাতের লাঠি, তাসবীহ, ছাতা, ইত্যাদি জোরে নিক্ষেপ না করা বা না রাখা।

Ø  মসজিদে পা টেনে  না বসা বা হাটুতে মাথা গুজে না বসা। শিশু এবং পাগল কোন ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ  না করানো।

Ø  মসজিদের ভিতর সামাজিক কোন কারনেই চিৎকার না দেওয়া বা হট্রগোল না করা।

Ø  মসজিদের ভিতর কোন বিধর্মি যাতে প্রবেশ করতে না পারে সে দিকে খেয়াল রাখা।

Ø  ইমাম সাহেবের যুগোপযোগি ইসলামী বক্তব্য মনযোগ দিয়ে শুনা।

Ø  মসজিদের প্রবেশের সময় বা বাহির হওয়ার সময় ধাক্কা-ধাক্কি না করা।

Ø  মসজিদের সামনের কাতারে বসার জন্য তারাতারি করতে গিয়ে পিছনে যারা বসে আছে তাদের কাঁদের উপর দিয়ে পা তুলে যাতায়াত না করা, ইত্যাদি নিয়ম গুলো মসজিদের আদব রক্ষার জন্য খুবই জরুরী।

মসজিদের ভিতরে কথা বলাকে নিষেধ করতে গিয়ে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, যদি কোন ব্যক্তি মসজিদে দুনিয়াবি কথা বলে, তবে ওই ব্যক্তির চল্লিশ বছরের আমল বরবাদ হয়ে যাবে। আরেক জায়গায় রাসুল সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- মসজিদে যদি কেউ দুনিয়াবি কথা বলে, তার ওই কথা গুলো তার ভালো আমলকে এমন ভাবে খেয়ে ফেলে, যেমন চতুষ্পদ প্রানী ঘাষ খেয়ে ফেলে।

মসজিদের ভিতরে কথা বলতে নিষেধ করতে গিয়ে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন- যখন কোন ব্যক্তি মসজিদে কথা শুরু করে তখন রহমতের ফেরেস্তাগন ডাক দিয়ে বলেন- হে আল্লাহ’র বন্ধু তুমি চুপ হয়ে যাও, তারপর যদি ওই ব্যক্তি চুপ না হয়, ফেরেস্তাগন কিছুক্ষন পর আবার ডাক দিয়ে বলেন- হে আল্লাহ’র শত্রু তুমি চুপ কর, এরপরও যদি ওই ব্যক্তি চুপ না করে তাহলে ওই ফেরেস্তা এবার বলে- তোমার উপর আল্লাহর অভিশাপ তুমি চুপ কর।

উপরেল্লেখিত আলোচনায় আমরা এটা বুজতে পারি যে- আল্লাহ’র ঘর মসজিদে আমরা যখন ঢুকবো তখন আমরা আল্লাহ’র গোলাম হিসাবে অনেক ভক্তি শ্রদ্ধা নিয়ে মসজিদে ঢুকবো। মসজিদে ঢুকে সর্বদায় আল্লাহকে ভয় করবো নিদ্রিষ্ট ইবাদত ব্যতিরেখেও কিছু কিছু নফল ইবাদতের মাধ্যমে মহান আল্লাহর শোকর গূজার করবো এবং স্বীয় গুনার জন্য আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করবো।

কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আজকের সমাজের অনেক মসজিদেই দেখা যায়- সমাজের বিভিন্ন বিষয়ে, রাজনৈতিক বিভিন্ন বিষয়ে বিভিন্ন আলোচনার শুরু হয়ে এমন এক বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয় যাহা ইসলামের নিয়ম বহির্ভুত।

আসুন আমরা সবাই আমাদেরকে সংশোধন করি, একমাত্র আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামিন ও প্রিয় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভালোবাসায় নিজের জীবনকে সিক্ত করি, এবং সেই অনু্যায়ী নিজেকে পরিচালিত করি। আল্লাহ্‌ যেনো আমাদের সবাইকে মসজিদের আদব রক্ষা করে চলার তৌফিক দান করে সেই কামনা ও দোয়া রইল।

কবিরা গুনাহ থেকে বাঁচতে হলে আমাদেরকে জানতে হবে ও মানতে হবে

imagesআ স ম আহসান উল্লাহ আব্দুল্লাহ: পবিত্র কোরান শরিফে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন - তোমরা যদি সেই মহা পাপ সমূহ থেকে বিরত থাকতে পারো, যাহা হইতে তোমাদেরকে নিষেধ করা হয়েছে, তাহলেই আমি তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করবো এবং তোমাদেরকে সন্মানপ্রদ গন্তব্যস্থানে প্রবিষ্ট করবো। (সূরা নিসা-আয়াত৩১)

বর্ণীত আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা নিজ দয়ায় এবং নিজ দায়িত্বে ঐব্যক্তিকে জান্নাতে প্রবেশ করানোর জামিন হয়েছেন, যে ব্যক্তি কবিরা গুনাহ সমূহ থেকে নিজেকে মুক্ত রেখেছ, তাদের জন্য। কেননা সগিরা গুনাহগুলো জুমা ও পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ও রমজানের রোজা ইত্যাদী দ্বারা মাফ হয়ে যায়। হাদীস শরীফে রাসূল সাঃ ইরশাদ করেন,পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ এবং এক জুমা থেকে অন্য জুমা ও এক রমজান থেকে অন্য রমজান-মধ্যবর্তি সময়ের সগিরা গুনাহ সমূহের জন্য কাফফারা স্বরূপ, যদি বান্দা কবিরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকে। অর্থাৎ বান্দা যদি নিজেকে কবিরা গুনাহ থেকে বাঁচিয়ে রাখে, তবে এক নামাজ থেকে দ্বিতীয় নামাজের পূর্ব পর্যন্ত সময়ে কোন সগিরা হয়ে থাকলে তা দ্বিতীয় নামাজ আদায়ের দ্বারাই মাফ হয়ে যাবে। এমনিভাবে জুমা ও রমজানের দ্বারাও তার মধ্যবর্তি গুনাহ মাফ হবে। (মুসলিম শরিফ)

এ থেকে এটা স্পষ্ট হয় যে কবিরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাথে আরো একটি বিষয় দ্রষ্টব্য যে - উলামায়ে কিরামের ভাষ্যানুযায়ি, তাওবা ও ইস্তেগফারের পর কবিরা গুনাহ থাকেনা অর্থাৎ মাফ হয়ে যায় তেমনিভাবে সগিরা গুনাহ ও বার বার করার দ্বারা সগিরা গুনাহ থাকেনা বরং তা কবিরা গুনাহে রূপান্তরীত হয়ে যায়। সুতরাং কবিরা গুনাহ থেকে বাঁচতে হলে প্রথমত কবিরা গুনাহকে জানতে হবে এবং সেগুলো চিনতে হবে। কেননা না চিনলে তা থেকে নিজেকে বাঁচাবো কিভাবে, আর সাথে সাথে সকল সগিরা গুনাহ থেকেও নিজেকে মুক্ত রাখতে হবে। এ প্রসংগেই হযরত হুযাইফা ইবনুল ইয়ামান রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন,মানুষ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে ভাল কাজের ব্যপারে প্রশ্ন করতো, অথচ আমি মন্দ কাজের ব্যপারে জেনে নিতাম,এ ভয়ে যে খারাপ যেন আমাকে না পেয়ে বসে।

অনেকেই মনে করে থাকেন যে কবিরা গুনাহ শুধুমাত্র সাতটি, যা হাদীসে কাবায়েরে (কবিরা গুনাহ সম্পর্কিত হাদীস) উল্লেখ আছে। কিন্তু এ ধারণাটি সঠিক নয়। কেননা এ সাতটি কাজ কবিরা গুনাহ ঠিকই, কিন্তু এ হাদীসের মধ্যে কবিরা গুনাহ কে এ সাতটির মধ্যে সিমাবদ্ধ করা হয়নি। অর্থাৎ এ হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ সাতটির মধ্যে কবিরা গুনাহকে সিমাবদ্ধ করেননি, সাতটি ধ্বংসাত্মক কবিরা গুনাহের বর্ণনা দিয়েছেন মাত্র। আল্লামা শামছুদ্দীন যাহবী রাদিয়াল্লাহু তায়ালা বলেন,হাদীসে কাবায়ের এর সাতটি গুনাহের মধ্যে কবিরা গুনাহের সিমাবদ্ধতা নেই। শাইখুল ইসলাম আল্লামা ইবনে তাইমিয়া রাহমাতুল্লাহ ও অন্যান্য উলামায়ে কিরাম বলেন, “কবীরা গুনাহ হল প্রত্যেক ঐ গুনাহ যার জন্য দুনিয়াতে শাস্তির বিধান রয়েছে অথবা আখিরাতে শাস্তির ধমকি বা হুসিয়ারি দেয়া হয়েছে” আল্লামা ইবনে তাইমিয়া রাহমাতুল্লাহ আলাইহি একটু বাড়িয়ে এও বলেছেন, যে গুনাহের জন্য ঈমান চলে যাওয়ার ধমকি এসেছে কিংবা লানত (বদ দোয়া) ইত্যাদী করা হয়েছে তাও কবীরা গুনাহের অন্তর্ভূক্ত। আর এ কবীরা গুনাহকে  উলামায়া কিরামগন চিহ্নিত করেছেন নিন্মরুপেঃ-

১- আল্লাহ তাআলার সাথে শিরক করা,

২- মানুষ হত্যা কর,

৩- যাদু করা (ভান, টোনা মেরে মানুষের ক্ষতি করা)

৪- নামাজ না পড়া,

৫- জাকাত আদায়ে অস্বিকার করা,

৬- কোন বৈধ কারণ ছাড়া রমজানের রোজা না রাখা,

৭- শক্তি ও সামর্থ থাকা সত্বেও হজ্ব না করা,

৮- পিতা মাতার অবাধ্য হওয়া,

৯- স্বজনদের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রাখা এবং আত্মীয়তা ছিন্ন করা,

১০- জিনা বা ব্যাভিচারে লিপ্ত হওয়া,

১১- সমকামিতা বা মহিলার পেছন পথে সংগম করা,

১২- সুদ খাওয়া,

১৩- এতিমের সম্পদ ভক্ষণ (ভোগ) করা,

১৪- আল্লাহ তাআলা ও তাঁর রাসূল সাঃ এর উপর মিথ্যা আরোপ করা,

১৫- রাষ্ট্র প্রধান কতৃক প্রজাদের সম্পদ ও অধিকার আত্মসাত এবং প্রজাদের উপর অত্যাচার করা,

১৬- অহংকার,

১৭- মিথ্যা স্বাক্ষী দেয়া,

১৮- মদ পান করা,

১৯- জুয়া খেলা,

২০- সতি সাধবী মহিলার উপর মিথ্যা অপবাদ দেয়া,

২১- চুরি-ডাকাতি করা,

২২- মিথ্যা বলা, মিথ্যা কসম বা শপথ,

২৩- জুলুম বা অত্যাচার করা,

২৪- হারাম মাল ভক্ষণ এবং যে কোন ভাবে তা ব্যবহার করা,
২৫- আত্মহত্যা করা,
২৬- আল্লাহ প্রদত্ত ইসলামী বিধান বাদ দিয়ে মানব রচিত বিধানে বিচার কার্য সম্পাদন করা,
২৭- ঘুষ খাওয়া এবং ঘুষ নিয়ে কারো পক্ষে রায় দেয়া,
২৮- পোষাক পরিচ্ছেদ, চলা ফেরা ইত্যাদীতে নারী পুরুষের রূপ ধারণ করা কিংবা পুরুষ নারীর রূপ ধারণ করা
২৯- দু জনের মধ্যে বিবাদ সৃষ্টির চেষ্টা এবং (দাইয়ূছ) যে নিজের পরিবারের অপকর্ম কে উদারমনা হয়ে সমর্থন করে
৩০- হারামকে হালাল করা (স্ত্রী কে তিন তালাক দেয়ার পর স্বামির জন্য ঐ স্ত্রী হারাম হয়ে যায়। কিন্তু ঐ মহিলার দ্বিতীয় কোথাও স্বাভাবিক বিয়ে হওয়ার পর যদি ঐ স্বামি তাকে তালাক দেয় তবে এই মহিলা তার প্রথম স্বামির জন্য হালাল হয়।পূণরায় বিয়ে করে তাকে গ্রহন করতে পারে। অথচ এখন দেখা যায় স্বামি স্ত্রীকে তালাক দেয়ার চুক্তি ভিত্তিক হিল্লা বিয়ে দেয়া হয় কিছু সময়ের জন্য। যখন চুক্তি মাফিক চুক্তি বিয়ের স্বামি মহিলাকে তালাক দেয়,প্রথম স্বামি পূণঃ বিয়ে পড়ে তাকে গ্রহন করে। এটা শরিয়ত সন্মত নয়। এখানে চুক্তি ভিত্তিক স্বামি হল হালাল কারী আর প্রথম স্বামি হল যার জন্য হালাল করা হয়েছে। এখানে উভয়েই এই কবিরা গুনায় সমান অংশিদার।)

৩১- প্রস্রাব থেকে পরিচ্ছন্ন না থাকা (এটা খৃষ্টান্দের একটি সংস্কৃতি)

৩২- চতুস্পদ প্রাণীর মুখে লোহা দিয়ে চিহ্ন দেয়া

৩৩- দুনিয়া হাসিলের উদ্দ্যেশ্যে দ্বিনী এলেম শিক্ষা করা এবং এলেম শিক্ষা করে তা প্রচার ও প্রকাশ না করে লুকিয়ে রাখা

৩৪- গচ্ছিত মাল বা আমানতের খেয়ানত করা,

৩৫- কারো উপর দয়া,অনুগ্রহ,দান বা উপকার করে খোঁটা দেয়া,

৩৬- তাক্বদীর বা ভাগ্য কে অস্বিকার করা,

৩৭- চুপি চুপি লুকিয়ে মানুষের গোপন কথা শ্রবণ করা,

৩৮- চোগলখোরি বা বিবাদ সৃষ্টির লক্ষ্যে এক জনের কথা অন্যের নিকট আদান প্রদান করা,

৩৯- কাউকে লানত বা গালিগালাজ করা,

৪০- অঙ্গীকার,ওয়াদা বা চুক্তি ভঙ্গ করা,

৪১- জ্যোতিষি গনক বা যাদুকরকে বিশ্বাস করা,

৪২- স্ত্রী স্বামীর অবাধ্য হওয়া,

৪৩- বিপদের সময় চিৎকার করে কান্নাকাটি করা,বুক বা মুখ চাবড়ানো,পরিধেয় পোষাক ছিঁড়ে ফেলে,মাথা ন্যড়া করা,চুল ছিঁড়ে ফেলা,নিজেদের জন্য ধ্বংশ ইত্যাদী ডেকে বিলাপ করা,

৪৪- বিদ্রোহ করা বা অতিরঞ্জিত করা,

৪৫- দুর্বল অধিনস্ত দাস দাসী, স্ত্রী কিংবা কোন প্রাণীর উপর হাত উঠানো বা প্রহার করা,

৪৬- প্রতিবেশী কে যেকোন ভাবে কষ্ট দেয়া বা গালি দেয়া

৪৭- স্বর্ণ কিংবা রৌপ্যের পাত্রে আহার বা পান করা এবং পুরূষ রেশমি কাপড় (সিল্ক) বা স্বর্ণ পরিধান করা

৪৮- আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে প্রাণী জবাই করা যেমন শয়তানের নামে যাদু করার জন্য,মূর্তির নামে,পীর সাহেবের নিয়তে ইত্যাদী,

৪৯- জেনে শুনে নিজ পিতাকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে পিতা বলে মানা বা দাবী করা,

৫০- ঝগড়া বিবাদ,কারো সাথে নিজের ব্যাক্তিত্ত্ব প্রকাশ বা তাকে হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দ্যেশ্যে বিতর্কে লিপ্ত হওয়া

৫১- ধোকাবাজী করা ও ঠকানো এবং মাপে কম দেয়া (এটা খুব বেশি দেখা যায় আমাদের দেশের গোশ্ত বিক্রেতাদের মাঝে। এছাড়া অন্যরা ও করে থাকে।)

৫২- আল্লাহ তাআলার পাকড়াও ও হস্তক্ষেপ থেকে নিশ্চিন্ত ও নির্ভয় হওয়া,

৫৩- মৃত প্রাণীর গোস্ত এবং প্রাণীর রক্ত ও শুকরের গোস্ত খাওয়া,

৫৪- কোন ওজর (শরীয়ত স্বিকৃত সমস্যা) ছাড়া জুমার নামাজ বা জামাত ছেড়ে দিয়ে একাকী নামাজ আদায় করা

৫৫- আল্লাহ তাআলার রহমত ও অনুগ্রহ থেকে নৈরাশ হওয়া

৫৬- কোন মুসলমান কে কাফির বলা

৫৭- মুসলমানদের মধ্যে গোয়েন্দাগিরী ও তাদের গোপনীয়তা সম্পর্কে অবগত হওয়া (বিবাদ সৃষ্টির লক্ষ্যে)

৫৮- সাহাবাদের কাউকে গালি দেয়া,

৫৯- বিচারক কার্যে অনিয়ম করা,

৬০- বংশ নিয়ে একে অপরকে তিরস্কার বা ধিক্কার দেয়া বা হেয় প্রতিপন্ন করা,

৬১- মৃত ব্যাক্তির উপর চিৎকার করে আহাজারি করা, বুক চাবড়িরা, বুক চাবড়িয়ে জামা কাপড় ছিড়ে বিলাপ করা,

৬২- রাস্তার চিহ্ন বা মাইলফলক সরিয়ে ফেলা (মিটিয়ে দেয়া)

৬৩- কোন অসৎকাজ প্রতিষ্ঠা কিংবা মানুষকে পথভ্রষ্টতার দিকে আহবান করা,

৬৪- মহিলারা নিজের চুলের সাথে নকল চুল মিলানো এবং চেহারার লোম ইত্যাদী উঠানো সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য,

৬৫- কোন ধাতব বা ধারাল বস্তু অন্যের দিকে উঁচু করা বা আঘাতের লক্ষ্যে নিশানা বানানো,

৬৬- পবিত্র হারাম শরিফে (মক্কায়) বা হারামের সিমানার মধ্যে অন্যায় অত্যাচারে লিপ্ত হওয়া।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো ইরশাদ করেনঃ-

১- যে ব্যক্তি কারো স্ত্রীকে বা দাস কে স্বামি ও মালিকের বিরুদ্বে উস্কে দিল সে আমার উম্মতের অন্তর্ভূক্ত নয়,

২- ভাইয়ের সাথে এক বৎসর সম্পর্ক ছিন্ন রাখা তাকে হত্যা করার সমতুল্য,

৩- যে ব্যক্তির সুপারিশে আল্লাহ প্রদত্ত কোন শাস্তি রহিত হল সে যেন একাজ দ্বারা আল্লাহর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলো,

৪- তোমরা মুনাফেক্বকে (সাইয়েদুনা) আমাদের নেতা বলোনা। মুনাফেক্বকে নেতা বললে আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন

৫- যে ব্যক্তি বিনা অনুমতিতে কারো ঘরে উঁকি মেরে দেখল,ঐ পরিবারের জন্য তার চক্ষু নষ্ট করে দেয়া বৈধ

৬- যে ব্যক্তি মানুষের কৃতজ্ঞতা আদায় করেনা সে আল্লাহ তাআলার প্রতি ও অকৃতজ্ঞ।

উপরোল্লেখিত যে কবিরা গুনাহ গুলোর বর্ণনা পেশ করছি সে গুলো কবিরা গুনাহ হওয়ার পক্ষে কুরান ও হাদীসে একাধিক প্রমান রয়েছে।এখানে এ সংক্ষিপ্ত পরিসরে তা উল্লেখ করা সম্ভব নয়।

আসুন আমরা সবাই যাতে সকল প্রকার কবিরা গুনাহ থেকে হেফাজত থাকতে পারি এবং আমাদের জানা-অজানা সকল গুনাহ থেকে ক্ষমা পাওয়ার জন্য মহান আল্লাহ্‌ সুবহানাহু তায়ালার নিকট সর্বদায় তওবা করবো এই হোক আমাদের প্রত্যয়।

তবে মনে রাখতে হবে ক্ষমা পাওয়ার আশায় বার বার গোনাহ করা যুক্তিযুক্ত নয়, বরং এরূপ ধারণা করাও এক প্রকার স্পর্ধা ও মহাপাপ। তবে কৃত গোনাহের জন্য অনুতপ্ত ও লজ্জিত হওয়া এবং তওবা করাই হচ্ছে মুমিনের করণীয়। তাই ক্ষমা প্রার্থনায় দেরী করতে নেই। যে দেরী করে, তাকে আল্লাহ পাক অপছন্দ করেন, আর যে অনুতপ্ত হয়ে অনতি বিলম্বে ক্ষমা প্রার্থনা করে আল্লাহ পাক তাকে অত্যন্ত পছন্দ করে থাকেন। হাদীস বিশারদগণ উল্লেখ করেছেন, গোনাহ করে ক্ষমা প্রার্থনায় বিলম্ব করা আরেকটি মহাপাপ আর গোনাহ করে সাথে সাথে ক্ষমা প্রার্থনা করা, আল্লাহর দরবারে দীনতা-হীনতা প্রকাশ করা ও নিজেকে অপরাধী হিসেবে পেশ করা মুক্তির অন্যতম উপায়। আল্লাহকে ভয় করা চাই। তবে তার দয়া থেকে নিরাশ হতে নেই। কেননা আল্লাহ ব্যতীত আর কোন আশা-ভরসার স্থল নেই। বান্দার এরূপ বিশ্বাস তার ক্ষমার পথ সুগম করে এবং উন্নতির পথ সহজ ও প্রশস্ত করে। এরূপ ভয় ও আশার মাঝখানে ঈমান অবস্থান করে বলে রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মত প্রকাশ করেছেন।

আল্লাহ্‌ যেনো আমাদের সবাইকে সার্বিক হেফাজত করেন এবং সকল প্রকার গুনা থেকে রক্ষা করে আমাদের ঈমানকে সুদৃঢ় করেন, আমীন।

কিছু বিধি-নিষেধ

Hanshak20120503152415কুমিল্লার বার্তা ডেস্ক: কিছু ভালো অভ্যাস রয়েছে যা আমাদের নিজেদের চর্চা করতে হবে এবং আশপাশের সবাইকে বিশেষ করে শিশুদের চর্চা করতে বলতে হবে। আবার কিছু কাজ করা থেকে নিজেদের ও আশপাশের সবাইকে বিরত রাখার চেষ্টা করতে হবে।

অন্যদিকে, শিশুরা অনুকরণ প্রিয় তাই নিজেরা কিছু বিধি-নিষেধ মেনে, সঠিক পথে চলে, তাদের শিক্ষা দেওয়া খুব জরুরি।

কিছু কাজ করে, আবার কিছু কাজ না করে আমরা পেতে পারি অশেষ সওয়াব, হতে পারি আল্লাহর প্রিয় বান্দা।

নিচে উল্লেখ করা হলো এমনই কিছু বিধি-নিষেধ:

মুসলমানদের সম্ভাষণ জানাতে হবে হাসি মুখে সালাম (আসসালামু আলাইকুম) দিয়ে।

আমরা যখন হাঁচি দিই, তখন শয়তান দূরে নিক্ষিপ্ত হয়। তাই এ সময় বলতে হয়- আলহামদুলিল্লাহ।

যখন আমরা হাই তুলি, মূলত শয়তান তখন আমাদের ভেতরে ঢোকে। তাই বলতে হয়- লা হাওলা ওয়ালা কুউয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।

খাওয়ার সময় ঢেঁকুর তোলা আল্লাহ অপছন্দ করেন, কিন্তু এ কাজ শয়তানের খুব পছন্দ। তাই এ কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

নিজে খারাপ কাজ করা থেকে বিরত থাকি এবং অন্যকেও বিরত রাখার চেষ্টা করি- আশা করা যায় এতে আল্লাহ খুশি হবেন।

নিজের খাবার থেকে দরিদ্র ও ক্ষুধার্থকে কিছু দিই-কারণ আমাদের সবার একটু একটু সাহায্যই গড়তে সাহায্য করবে ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত পৃথিবী। আর এটা আমাদের ভালো কাজের সংখ্যা বাড়াবে এবং আল্লাহর সামনে আমাদের ভালো মানুষ হিসেবে উপস্থাপন করবে।

সব কাজ বন্ধ রেখে সময়মতো সালাত আদায় করি, কারণ শয়তান আমাদের বেহেশতে যাওয়া রুখতে চায়। সময়মতো পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করা ইসলামে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

সালাত আদায় করার সময় শয়তান হয়তো আমাদের মাথায় খারাপ চিন্তা আনতে পারে, তাই এ সময় শুধুই সালাতের দিকে মনোযোগ দিতে হবে।

কাউকে কষ্ট দেওয়া বা কাউকে নিয়ে ঠাট্টা-তামাশা করা উচিৎ নয়, কারণ এসব শয়তানের কাজ। বরং সবার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখতে হবে এবং সবাইকে সম্মান করতে হবে।

চুরি করা খুব খারাপ অভ্যাস, চুরি করলে কেউ তাকে বিশ্বাস করেনা এবং সে শয়তানের দলে অন্তর্ভুক্ত হয়।

আমরা সবাই যেন বাবা-মাকে ভালবাসি, কারণ তারা আমাদের খাইয়েছেন, সাধ্যমতো মিটিয়েছেন সব চাহিদা, তার চেয়েও বড় কথা তারা আমাদের অনেক ভালোবাসা দিয়েছেন। 

রাগ-ক্রোধকে সংবরণ করি, কারণ রাগলে আমরা কাউকে আঘাত করতে পারি বা অপমান করতে পারি, তাই ইসলামে ক্রোধকে হারাম করা হয়েছে।

বিড়াল দেখলে ভয় পাওয়া বা বিড়ালকে আঘাত করা থেকে বিরত থাকি, কারণ মুহম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (সা.) নিজে বিড়াল ভালোবাসতেন এবং অন্যদেরও বিড়ালকে আদর করতে বলতেন।

একতাই শক্তি, তাই নিজেদের ভাতৃত্ববোধ শক্তিশালী করতে হবে।

যেখানে সেখানে ময়লা ফেলা ঠিক না, কারণ এটা সেই দুষ্টু শিশুর মতো কাজ, যে কোনো আচরণই জানে না। এছাড়া পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা ইমানের অঙ্গ।

গ্রহ-নক্ষত্র, চাঁদ, সূর্য, তারা, মানুষ এবং এ মহাবিশ্বের সবকিছুই মহান আল্লাহর সৃষ্টি, তাই সব সময় আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ থাকতে হবে।

ইসলাম ও ঈমান

Islam flagজাহাঙ্গীর আলম: ইসলাম হচ্ছে আত্মসমর্পণ করা এবং বাধ্যতা, অস্বীকৃতি ও হটকারিতা ত্যাগ করা। এখানে আত্মসমর্পণ করার অর্থ হচ্ছে, এক আল্লাহর কাছে নিজেকে সমর্পণ করা, একমাত্র আল্লাহই স্থায়ী বাকি যা কিছু আছে সবই ক্ষণস্থায়ী, ভঙ্গুর। সব কিছুই সাবেক হবে একমাত্র আল্লাহ ছাড়া-এই বিশ্বাস দৃঢ়ভাবে অন্তরে ধারণ করতে হবে এবং বাধ্যতা হচ্ছে আল্লাহ পবিত্র কোরআনে যে পদ্ধতিতে জীবন যাপন করতে বলেছেন সেই সীমানার মধ্যে থেকে জীবন যাপন করা।

আল্লাহর বন্ধু, শেষ নবী,সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব, মহানবী  হযরত মোহাম্মাদ (সা.) এর জীবন যাপন পদ্ধতিতে যা রয়েছে তাই ইসলাম। আল্লাহ’র রাসূলের জীবন, আচার, আচরণ, চলাফেরা, খাদ্য, কথা, পোশাক, স্ত্রী-পরিজন, সমাজ, আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী, হারাম, হালাল সব কিছুই এক আল্লাহতে সমর্পিত।

পবিত্র কোরআন ও ওহির মাধ্যমে প্রাপ্ত নির্দেশের বাধ্য বাধকতায় থাকার এক অপূর্ব নিদর্শন। রাসুলকে (সা.) মানা, তিনি যেভাবে সব ক্ষেত্রে এক আল্লাহতে আত্মসমর্পণ করে এবং আল্লাহর নির্দেশিত সীমানা মেনে চলেছেন তাই ইসলাম। রাসুলের (সা.)  সমগ্র জীবন এক ব্যবহারিক কোরআন।

মাওলানা রুমী (র.) বলেছেন “আল্লাহ তা’য়ালার বক্তব্য অবিকল রাসুলের (সা.) কণ্ঠে প্রকাশ পেয়েছে”।  মহান আল্লাহ তা’য়ালা তাঁর পবিত্র কোরআনে বলেছেন, “বহু রাসুল তোমার পূর্বেও প্রেরণ করিয়াছি, দিয়াছিলাম তা দিগকে স্ত্রী এবং সন্তান-সন্ততি এবং কোনো রসুলের এমন সাধ্য ছিল না যে আল্লাহর নির্দেশ ছাড়া কোনো নিদর্শন উপস্থিত করে। প্রত্যেকটি ওয়াদা লিখিত আছে।
সুরা রা’আদ আয়াত ৩৮।

এ আয়াতের মাধ্যমে মহান আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে রাসুল (সা.) নিজ থেকে কখনো কিছু বলেন নি। যা কিছু আল্লাহর রাসুল (সা.) করেছেন তার সবকিছুই আল্লাহর ইচ্ছার অধীন, এ কথা অকাট্যভাবে প্রমাণিত।

সুরা আল-হাক্কাহতে মহান আল্লাহ বলেছেন, “তোমাদের দৃশ্যমান বস্তুর কসম করেছি এবং অদৃশ্যমান বস্তুর, নিশ্চয়ই এই কোরআন একজন সম্মানিত রসূলের আনীত।     এবং এটা কোনো কবির কালাম নয়; তোমরা কমই বিশ্বাস কর। এবং এটা কোনো অতীন্দ্রিয়বাদীর কথা নয়; তোমরা কমই অনুধাবন কর।    এটা বিশ্বপালনকর্তার কাছ থেকে অবতীর্ণ। সে যদি আমার নামে কোন কথা রচনা করত, তবে আমি তার দক্ষিণ হস্ত ধরে ফেলতাম, অতঃপর কেটে দিতাম তার গ্রীবা। তোমাদের কেউ তাকে রক্ষা করতে পারতে না। এটা খোদাভীরুদের জন্যে অবশ্যই একটি উপদেশ।     সুরা আল হাক্কাহ আয়াত (৩৮-৪৮)।

এই আয়াতগুলোতে মহান আল্লাহ কসম করে বলেছেন যে এই কোরআনে বর্ণিত সব কিছুই তাঁর বাণী যা তিনি তাঁর সম্মানিত রাসুল (সা.) মারফত প্রেরণ করেছেন। এটা কোনো কবি বা কাহিনীকারের দ্বারা রচনা করা সম্ভব নয়।

পবিত্র কোরআনের আয়াতগুলো অবশ্যই মহান রব্বুল আ’লামিনের বাণী এবং আল্লাহর রাসুল (সা.) যদি এতে কোনো রকম পরিবর্তন করতেন তবে আল্লাহ তাঁর রাসুলকে (সা.) কঠোরভাবে ধরতেন এবং কণ্ঠশিরা কেটে দিতেন যাতে মৃত্যু ত্বরান্বিত হয়। এবং আল্লাহ এও বলেছেন যে তোমরা সল্পসংখ্যক তা অনুধাবন করো যা একান্তই মোত্তাকিদের জন্য উপদেশ। তাহলে আল্লাহ যে বিষয়ে নিজে তাঁর রাসুলের (সা.) ব্যাপারে সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, রাসুল (সা.) যা বলেছেন তা আল্লাহর কথা, রাসুল (সা.) যা করেছেন বা করেননি সবই আল্লাহর নির্দেশ।

আল্লাহর রাসুল (সা.) এক আল্লাহতে আত্মসমর্পণ করেছিলেন এবং আল্লাহর নির্দেশিত পথে চলেছেন।

মহানবীর (সা.) পর তাঁর উম্মতদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ মানব তারা যারা চর্মচক্ষে মহানবী হযরত মোহাম্মাদকে (সা.) দেখেছিলেন এবং তাঁর পবিত্র সান্নিধ্য লাভ করেছিলেন। তারা সবাই ছিলেন মহানবীর (সা.) জীবনাদর্শের প্রধানতম উদাহরণ।

তাঁদের জীবন ছিলো রাসুলের (সা.) মহব্বতে পরিপূর্ণ। পরবর্তীকালে সাহাবারা (রা.) আল্লাহর নির্দেশিত ও তাঁর রাসুলের (সা.) দেখানো পথে জীবন যাপন করেছেন। এটাই ইসলাম।

ইসলাম এমন একটি পথ যা দেখে আপনার সম্পর্কে অন্যদের আগ্রহ সৃষ্টি হবে। মুসলমানের আচার-আচরণ এমন হতে হবে যা দেখে অন্যরা ইসলামের প্রতি আগ্রহ বোধ করবে। বোখারি শরিফের প্রথম খণ্ড হাদিস নম্বর ৯ এ সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) হতে বর্ণিত, নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (সা.) বলেছেন, মুসলমান ওই ব্যক্তি যার কোনো কথা বা কাজের দ্বারা অন্য মুসলমানের কষ্ট না হয়। মুহাজের ওই  ব্যক্তি যে আল্লাহর ঘোষণা করা নিষিদ্ধ বিষয়গুলো বর্জন করেছে।

ইসলাম একটি ধর্ম। পাঁচটি মৌলিক বিষয়ের ওপর ইসলাম ধর্মের ভিত্তি স্থাপিত। তার মধ্যে সর্বপ্রধান হচ্ছে ঈমান। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে ও তাঁর রাসুলের (সা.) হাদিসের মাধ্যমে যা কিছু মানবজাতির জন্য প্রেরণ করেছেন তা মনে প্রাণে বিশ্বাস করা এবং মৌখিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়াকে ঈমান বলে। আরবীতে ঈমান শব্দের অর্থ বিশ্বাস।  

ঈমান আসলে একটা ব্যাপক বিষয়। সন্দেহজনক কার্যাবলী ত্যাগ করা হচ্ছে ঈমান। আল্লাহর সিফাতের সঙ্গে শরীক না করা, আল্লাহর রাসুলের বিরুদ্ধতা না করা, সৎ কাজের আদেশ অসৎ কাজ হতে নিষেধ করা হচ্ছে ঈমান, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করার নাম ইমান, নিজের লজ্জাস্থানের হেফাজত করা ঈমান। আর একজনের হক, হালাল, হারাম, মোনাফেকি, ওজনে কম দেওয়া থেকে বেঁচে থাকা ঈমান। আল্লাহ পবিত্র কোরআনে যেসব বিষয় মেনে চলতে বলেছেন তা মেনে চলা, আল্লাহ যা ত্যাগ করতে বলেছেন তা ত্যাগ করা, আল্লাহর রাসুল (সা.) যা করেছেন তা মেনে চলা, আল্লাহ এবং তাঁর রাসুলের তরিকার বাইরে কোনো নতুন পদ্ধতির উদ্ভাবন না করা হচ্ছে ঈমান। এমন কি রাস্তা থেকে ক্ষতিকারক বস্তু সরিয়ে ফেলাও ঈমানের অঙ্গ।

অনৈসলামিক কাজের প্রতিবাদ করাও ঈমান। যথাসময়ে নামাজ পড়া, রোজা রাখা, অর্থ থাকলে যথাসময়ে যাকাত দেওয়া, হজ করা, এতিম মিসকিনকে খাবার দেওয়া, আল্লাহর রাস্তায় নিজের ধন সম্পদ ব্যয় করা ইত্যাদি। এক কথায় আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ও পরকাল, সব আসমানি কিতাব, সব নবী ও রাসুলের প্রতি বিশ্বাস, অন্তরে দৃঢ়তার সঙ্গে পালন করার নাম ঈমান।

আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেছেন, ঈমানের শাখা-প্রশাখা ষাটের বেশি এবং লজ্জাও ঈমানের অন্যতম শাখা। (বোখারি শরীফ, হাদিস নম্বর ৮, খণ্ড-১,পৃষ্ঠা-৩২)

আল্লাহ পবিত্র কোরআনে সুরা নিসার ৮০ নম্বর আয়াতে বলেছেন,
“যে লোক রসুলের হুকুম মান্য করবে সে আল্লাহরই হুকুম মান্য করলো। আর যে লোক বিমুখতা অবলম্বন করলো, আমি আপনাকে (হে মুহাম্মদ), তাদের জন্য রক্ষণাবেক্ষণকারী নিযুক্ত করে পাঠাইনি।’’

আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন স্বাধীন চিন্তা ও বিবেক দিয়ে। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা হেদায়েত করেন। কোরআনই মহান আল্লাহ প্রেরিত শেষ কিতাব। এতে কোনো সংযোজন বা বিয়োজন করার কোনও অধিকার কারো নেই। এ জন্যই আল্লাহ তাঁর রাসুলকে (সা.) বলেছেন, ‘‘আপনার দায়িত্ব শুধু আমার বিধি বিধানগুলো পৌঁছে দেওয়া। কেউ মানলো কি মানলো না তার দায়ীত্ব আপনার নয়।’’

কারণ আল্লাহর রাসুল (সা.) আল্লাহর মাধ্যমে যাই বলেন তা ভালো কথা, হেদায়েতের কথা। যার ইচ্ছা সে হেদায়েত হবে, যার ইচ্ছা হবে না। কারণ একজনের কাজের জন্য অন্যজন জবাবদিহি করবে না।

আসুন আমরা শুধু মুসলমানের ঘরে জন্ম হয়েছে বলে মুসলিম না হয়ে আল্লাহ যে রকম বান্দা চান সে রকম হই। ঈমান মজবুত করার জন্য মেহনত করি। নিয়মিত কোরআন বুঝে পড়ি, নামাজ পড়ি, রাসুল (সা.) এর শেখানো পথে চলি। আল্লাহর রাসুলের প্রতি দরুদ শরীফ পাঠ করি যার তাগিদ আল্লাহ নিজে পবিত্র কোরআনে দিয়েছেন। আল্লাহ  বলেছেন, “আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতারা নবীর প্রতি দরুদ পাঠান, হে মুমিনরা, তোমরাও তাঁর প্রতি দরুদ ও সালাম পাঠাও”। (সূরা আহজাব, আয়াত ৫৬)

আমরা আল্লাহ নির্দেশিত পথে চললে হানাহানি বন্ধ হবে। সমাজে শান্তি ফিরে আসবে।

যৌবনকাল আল্লাহর শ্রেষ্ঠ নিয়ামত

muslim-coupleমিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম: যৌবনকাল মানুষের শ্রেষ্ঠ সময়, যা দুরন্তপনা ও সাহসিকতা প্রদর্শনের জন্য পরিচালিত করে। যেকোনো মহৎ উদ্দেশ্যে সহজে জীবন বিলিয়ে দিতে প্ররোচিত করে। যুবমানসের স্বভাব বা প্রকৃতি এবং সাহসিকতা সম্পর্কে বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক ডা: লুতফর রহমান বলেছেন, ‘যুবকদের গায়ের জোরে আস্থা বেশি। …যুবকেরাই যুদ্ধের যোগ্য। লড়াই করা, নিজের জীবনের মায়া না করা ওদের স্বভাব। নিজে ছোট বা দুর্বল, পরাজয়ের বিপদ তার ভাগ্যে ঘটতে পারে এ কথা সে মোটেই বিশ্বাস করতে পারে না।’ যৌবনকাল দায়িত্বপূর্ণ কাজের জন্য উপযুক্ত সময়। আল্লাহ নবী নির্বাচন করেছেন যুবকদের মধ্য থেকেই। হজরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস রা: বলেছেন, ‘আল্লাহ যুবক ছাড়া কোনো নবী পাঠাননি এবং যুবক ছাড়া কাউকে ইলম দান করেননি।’ তারপর এ আয়াতটি পাঠ করেন : ‘তারা বলে আমরা এক যুবককে মূর্তিগুলোর কথা স্মরণ করতে শুনেছি, যার নাম ইব্রাহিম।’ হজরত ইউসুফ আ: সম্পর্কে এরশাদ হয়েছে, ‘তিনি যখন পূর্ণ যৌবনে পৌঁছলেন, তখন তাকে প্রজ্ঞা ও ব্যুৎপত্তি দান করলাম।’ (সূরা ইউসুফ-২২)। হজরত মুসা আ: সম্পর্কে এরশাদ হয়েছে, ‘যখন মুসা আ: ভরা যৌবনে পদার্পণ করেন এবং পরিণত বয়সে পৌঁছেন, তখন আমি তাঁকে প্রজ্ঞা ও জ্ঞান দান করলাম।’ (সূরা কাসাস-১৪)। এভাবে প্রিয়নবী মুহাম্মদ সা: শৈশব ও কৈশোরে আদর্শবান ছিলেন, কিন্তু যখন যৌবনে পদার্পণ করলেন তখন তাঁকে নবুওয়াতের দায়িত্ব প্রদান করলেন আল্লাহ তায়ালা। রাসূল সা: যৌবনের গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে এক ব্যক্তিকে বললেন, পাঁচটি জিনিসকে পাঁচটি জিনিসের আগে মূল্যবান মনে করবে। বার্ধক্যের আগে যৌবনকে, অসুস্থতার আগে সুস্থতাকে, অভাবের আগে সচ্ছলতাকে, ব্যস্ততার আগে অবসরকে এবং মৃত্যুর আগে জীবনকে।’ (মিশকাত)। কিয়ামতের কঠিন হিসাবের দিন আল্লাহর আরশে স্থান লাভকারীদের মধ্যে অন্যতম হলো যুবকেরা, আল্লাহর আদেশ পালনে অগ্রগামী। তাই যৌবনের গুরুত্ব অনুধাবন করে শেখ সাদী র: যথার্থই বলেছেন, ইহকাল ও পরকালে যা প্রয়োজন যৌবনকালেই তা সংগ্রহ করো।

বিশ শতকের শ্রেষ্ঠ ইসলামী চিন্তাবিদ সাইয়্যেদ আবুল আ’লা মওদূদী র:-এর কিছু কথা এ মুহূর্তে মনে পড়ে গেল। তিনি বলেছেনÑ ১. মিথ্যার প্রাবল্য দেখে ঘাবড়ে যাবেন না। সে তো কখনো ঝড়ের বেগে আসে, আবার কখনো বুদবুদের মতো শূন্যে বিলীন হয়ে যায়। মিথ্যার মোকাবেলা করার কোনো চিন্তা আপনার করা ঠিক নয়, বরং চিন্তা আপনার সততার জন্য হওয়া উচিত। ২. ময়দানে মোকাবেলায় ভীত হয়ে দুর্গের মধ্যে আত্মগোপন করা কাপুরুষতার সুস্পষ্ট নিদর্শন। আল্লাহ তায়ালা এ জমিনকে কাপুরুষদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য সৃষ্টি করেননি। ৩. আল্লাহর অসীম অনুগ্রহ যে তিনি আমাদেরকে আঁধারে প্রদীপ জ্বালানোর তাওফিক দিয়েছেন। এ অনুগ্রহের শুকরিয়া আমরা এভাবে আদায় করব যে, প্রদীপ জ্বালাতে জ্বালাতেই মৃত্যুবরণ করব। ওপরের এই তিনটি উক্তি বর্তমান প্রোপটে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দেশ ও সমাজে এখন চলছে মিথ্যার প্রাবল্য, মিথ্যার দাপট, মিথ্যার বেসাতি। যা ঝড়ের বেগে বয়ে চলছে।

রাসূলুল্লাহ সা:-এর আন্দোলনে যুবকদের অংশগ্রহণ : রাসূল সা: সময়কালে যুবকদের নিয়েই তিনি হিলফুল ফুজুল বা শান্তি সঙ্ঘ, যুবসঙ্ঘ গঠন করেছিলেন। যেকোনো আন্দোলনে যুবকেরাই আন্দোলনের গতিপ্রকৃৃতি বদলে দেয়। যুবকেরাই সমাজ-দেশ-কালের চালিকাশক্তি। রাসূলুল্লাহ সা:-এর আন্দোলনে বৃদ্ধ লোকের চেয়ে যুবকদের সংখ্যাই বেশি ছিল। বয়োবৃদ্ধদের অনেকেই দ্বীনি আন্দোলনের বিরোধিতা করেছেন। তরুণ-যুবকদের রক্তই হলো ইসলামী আন্দোলনের ভিত্তি। তাদের ত্যাগের বিনিময়েই এই পৃথিবীর আনাচে-কানাচে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছেছে। আলী ইবনে আবু তালিব রা:, জাফর তাইয়ার রা:, যুবাইর রা:, তালহা রা:, সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস রা:, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা:, মুসআব ইবনে উমাইর রা:দের বয়স ইসলাম গ্রহণের সময় ২০ বছরের নিচে ছিল। আবদুর রহমান ইবনে আওফ রা:, বেলাল রা: ও সোয়াইব রা:-এর বয়স ২০ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ছিল। আবু ওবাইদা ইবনুল জাররাহ রা:, জায়েদ ইবনে হারেসা রা:, উসমান ইবনে আফফান ও উমর ফারুক রা:-এর বয়স ৩০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে ছিল। এভাবে আরো অনেক সাহাবির নাম বলা যাবে। এই তরুণ-যুবক সাহাবারা আমাদের তরুণদেরও প্রেরণার উৎস। হজরত মুসা আ:-এর সময়ও নওজওয়ানরা তাঁকে মেনে নিয়ে ছিল, বরং বয়স্করা প্রবল বিরোধিতা করেছিল। এরশাদ হচ্ছে, ‘(তারপর দেখো মুসাকে) তাঁর কাওম কিছু নওজওয়ান ছাড়া কেউ মেনে নেয়নি, ফেরাউনের ভয়ে এবং তাদের কাওমের নেতৃস্থানীয় (বয়স্কদের) ভয়ে। (তাদের আশঙ্কা ছিল) ফেরাউন তাদের ওপর নির্যাতন চালাবে।’ (সূরা ইউনুস-৮৩)। আল কুরআনে আসহাবে কাহাফ বা গুহাবাসীদের যে ঘটনা বর্ণনা করেছেন তারাও প্রত্যেকেই ছিলেন তরুণ-যুবক। এরশাদ হয়েছে, ‘যখন ক’জন যুবক গুহায় আশ্রয় গ্রহণ করল এবং তারা বলল, হে আমাদের রব! তোমার বিশেষ রহমত দ্বারা আমাদের প্লাবিত করো।’ (সূরা কাহাফ-১০)। আমাদের প্রিয়নবী সা: তরুণ-যুবকদের অত্যন্ত ভালোবাসতেন। তাদের ল্য করে বলেছেন, আমি তোমাদেরকে তরুণ-যুবকদের কল্যাণকামী হওয়ার জন্য নসিহত করছি, আদেশ দিচ্ছি। তাদের হৃদয় অত্যন্ত কোমল। আল্লাহ তায়ালা আমাকে উদারতা দান করেছেন এবং মানুষকে আল্লাহর দিকে ফিরিয়ে নেয়ার জন্যই পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন। আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে আমাকে সহযোগিতা করেছে তরুণ-যুবক সম্প্রদায়। দ্বীনি আন্দোলনে বয়োবৃদ্ধ শ্রেণী বাধার সৃষ্টি করেছে।

জেল-জুলুম-নির্যাতন আন্দোলনের অবিচ্ছেদ্য অংশ : কায়েমি শক্তি শাশ্বত আন্দোলনকে অন্য কোনো ভাবে মোকাবেলা করতে না পেরে অপপ্রচার, নির্যাতন ও শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে ধ্বংস করতে চায়। রাসূল সা:-এর আন্দোলন, আদর্শ ধ্বংসের জন্য আবু জেহেল, আবু লাহাবেরা সীমাহীন সন্ত্রাস ও নির্যাতন চালিয়েছিল। কবি, পাগল, গণক, জাদুকর বলে অপপ্রচার চালিয়েছে, ব্যঙ্গ-বিদ্রƒপ, গালিগালাজ করেছে, বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্য, উসকানিমূলক কথা বলেছে, দৈহিক নির্যাতন চালিয়েছে, শিয়াবে আবু তালেব গিরিগুহায় প্রায় তিন বছর অবরোধ করে রেখেছিল, তায়েফে তাঁর দেহ রক্তাক্ত করেছিল, এমনকি প্রাণনাশের অনেক ব্যর্থ চেষ্টাও চালিয়েছিল। তাঁর সাহাবিদের ওপর অকথ্য নির্যাতন চালিয়েছে। ইমাম আবু হানিফা র:, ইমাম মালেক র:, ইমাম হাম্বল র:, ইমাম ইবনে তাইমিয়া র:, ইমাম হাসানুল বান্না র:, সাইয়্যেদ কুতুব শহীদ র:, সাইয়্যেদ আবুল আ’লা মওদূদী র:, সাইয়্যেদ বদিউজ্জামান নুরসি র:, ইমাম খোমেনি র:, মুজাদ্দেদ আল ফেসানি র:, সাইয়্যেদ আহমদ বেরেলভি র:, জামাল উদ্দিন আফগানি র:, হাজী শরীয়ত উল্লাহ, মীর নিসার আলী তিতুমীর র: প্রমুখেরাও অনেক জুলুম-নির্যাতন-শাহাদত-নির্বাসনের মুখোমুখি হয়েছেন। আজো তাদের উত্তরসূরিরা ইসলামী আন্দোলনকে বলছে, মৌলবাদী, জঙ্গি, রাজাকার, যুদ্ধাপরাধী, মানবতাবিরোধী বলে অপবাদ দিচ্ছে। গ্রেফতার করে জেলে প্রেরণ করেছে, প্রহসনের বিচারের মুখোমুখি করেছে। যুগে যুগে জেল-জুলুম-নির্যাতনের রূপ ভিন্ন ভিন্ন হলেও মূল উদ্দেশ্য মহাসত্যকে অস্বীকার করা, শাশ্বত আদর্শকে যেকোনো উপায়ে ধ্বংস করা। নির্যাতনের মাত্রা কঠিনতর হতে পারে, ঈমানের বলে বলীয়ান হয়ে ধৈর্যের সাথে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে। এ পথ ফুল বিছানো নয়। এটাই হলো আন্দোলনের শিা এবং আন্দোলন-সংগ্রামের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

তরুণদের উদ্দেশে শহীদ ইমাম হাসানুল বান্না ও ইউসুফ আল কারজাভি : আমাদের যে মহান আন্দোলন তা নবী-রাসূলদের প্রদর্শিত পথে এবং বিশ্বনিয়ন্তার সন্তুষ্টির জন্যই। তরুণ-যুবকেরা অগ্রগামী হয়ে ঝাণ্ডা হাতে তুলে নেবে, যাদের দৃঢ় সঙ্কল্প হবেÑ হয় বিজয় নয় শাহাদত; হয় ষড়যন্ত্রকে রুখে দেয়া, নয় রাজপথে টিকে মরণপণ লড়াই করতে হবে। হাসানুল বান্না বলেছেন, ‘তোমরা এ জাতির বুকে এক নতুন আত্মা। আল কুরআনের সাহায্যে এ জাতিকে দেবে নতুন জীবন। তোমরা এক নতুন আলো। আল্লাহর পরিচিতি লাভ করে তোমরা জ্বলজ্বল করছো, তোমরা বস্তুবাদের বিনাশ করবে। তোমরা এক বুলন্দ কণ্ঠ। রাসূলুল্লাহ সা:-এর বাণী নতুনভাবে ঘোষণা করতে তোমরা উত্থিত। তিনি তাই তো ডাক দিয়েছেন তাদের ল করে। জাতির হে তরুণ-যুবকেরা জেগে ওঠো, বর্তমান বিশ্বের প্রোপট ঘোষণা করছে আগামী শতাব্দী ইসলামের শতাব্দী।’ ইউসুফ আল কারজাভি তরুণদের উপদেশ দিতে গিয়ে বলেন, ‘ইসলামই হচ্ছে আমাদের জীবনে প্রথম ও শেষ আদর্শ। এতেই আশ্রয় নিতে হবে এবং এর থেকেই শক্তি সঞ্চয় করতে হবে। ঈমান ও আমলে পরিপূর্ণ হয়ে সতর্ক হতে হবে, গোঁড়ামি ও বাড়াবাড়ি বর্জন করতে হবে এবং আন্দোলনে কোনো চরমপন্থা অবলম্বন করা যাবে না।’ কাজেই আমাদেরকে নেতৃত্বের যথাযথ আনুগত্য করে যেকোনো কঠিন অবস্থায় কর্মসূচি সফল করতে হবে।

চরম প্রতিকূলতা মোকাবেলা করতে হবে : ইসলামের প্রতিটি সঙ্কটে বীর তরুণ-যুবকেরাই এগিয়ে এসেছেন। বুক ফুলিয়ে গর্দান উঁচিয়ে অভিযানে বের হয়েছেন। জীবনের মায়া তুচ্ছ করে মহাসমরে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। ইসলামের যুদ্ধগুলোতে বেশির ভাগ সেনাপতিই ছিলেন যুবক। হজরত আলী রা:, উসামা বিন জায়েদ রা:, খালিদ বিন ওয়ালিদ রা:, তারেক বিন জিয়াদ রা:, মুসা বিন নুসাইর রা:, ওকবা বিন নাফে রা:, সালাহ উদ্দিন আইয়ুবি রহ:, মুহাম্মদ বিন কাসিম, বখতিয়ার খিলজী রহ:রাই ঊষর মরুর ধূসর দিগন্ত পাড়ি দিয়েছেন, বিজয় নিশান ছিনিয়ে এনেছেন। শৌর্যবীর্যে অবাক করে দিয়েছেন সমকালীন পৃথিবীকে। ফলে নতুন এক সভ্যতার জন্ম হয়েছিল। তাই আন্দোলন-সংগ্রাম এবং সর্বপ্রকার ষড়যন্ত্রকে নস্যাৎ করে সফলতার দ্বারপ্রান্তে এগিয়ে নিতে যুবকদের অনুপ্রাণিত করতে সাইয়্যেদ আবুল আ’লা রহ: বলেছেন, ‘এ কাজের জন্য এমন একদল দুঃসাহসী যুবকের প্রয়োজন, যারা সত্যের প্রতি ঈমান এনে তার ওপর পাহাড়ের মতো অটল থাকবে। অন্য কোনো দিকে তাদের দৃষ্টি নিবদ্ধ হবে না। পৃথিবীতে যা-ই ঘটুক না কেন, তারা নিজেদের ল্য-উদ্দেশ্যের পথ থেকে এক ইঞ্চিও বিচ্যুত হবে না।’

হে তরুণ, হে যুবক; মনে রাখবেন, রাত যত গভীর হয়, ভোরের আলো তত দ্রুত ফুটে ওঠে। জুলুম-নির্যাতন যতই বাড়ে, জালিমের পতন ততই অবশ্যম্ভাবী হয়ে ওঠে। অতএব জালিমের পতন অনিবার্য।

নবীপ্রেমিক ইমাম মালেক (রহ.)

moladunnobie-sm220130124145924মাওলানা ইয়াহইয়া মাহমূদ: নবীর আশেকের নিদর্শন ছিলেন ইমাম মালেক (রহ.)। একবার হাদিসের দরস দিচ্ছিলেন তিনি। দরসের মাঝে-মধ্যে তার চেহারা লাল হয়ে যেত। মনে হচ্ছিল বিষাক্ত কিছু তাকে বার বার দংশন করছে। দরস শেষে এক ছাত্রকে পিঠে কিসে কামড়াচ্ছে দেখতে বললেন। জামা সরিয়ে ছাত্র দেখল একটা বিষাক্ত বিচ্ছু অনবরত কামড়াচ্ছে আর রক্ত চুষে নিচ্ছে। বিচ্ছুর কামড়েই তিনি বার বার চেহারা বিকৃত করছিলেন। ছাত্ররা জিজ্ঞেস করলেন, এতক্ষণ কেন বলেননি তিনি? উত্তরে বললেন, বিচ্ছুর দংশনে আমি মরে গেলেও কিছু বলতাম না এবং দরস ছেড়ে উঠতামও না। কারণ আমার সামনে নবীর হাদিস। নড়াচড়া করলে হাদিসের প্রতি অবজ্ঞা হবে, আর তা হবে নবীর সঙ্গে চরম বেয়াদবি।

ইমাম মালেক বসবাস করতেন নবীর শহর মদিনায়। কোনো দিন সে শহরে প্রস্রাব-পায়খানা করতেন না তিনি। কারণ ওখানে শুয়ে আছেন নবী করিম (সা.)। আবার মদিনার বাইরেও যেতেন না। কারণ তখন মৃত্যু হলেও তা যে হবে মদিনার বাইরে! তাই প্রস্রাব-পায়খানার বেগ হলে তিনি চলে যেতেন সীমান্তে। এক পা মদিনায় আরেক পা মদিনার বাইরে রেখে হাজত সারতেন। ওই অবস্থায় মৃত্যু হলে তা যেন হয় মদিনায়।

যে ভূমিতে শুয়ে আছেন প্রিয় নবী (সা.) সে ভূমিতেই যেন তাঁরও সমাধি হয়, সে জন্য তিনি কখনো মদিনার বাইরে যেতেন না। শেষ বয়সে আরও একবার হজ করার খুব ইচ্ছা হলো তাঁর। কিন্তু হজ করতে গিয়ে যদি মারা যান, তাহলে তো নবীর শহর মদিনায় শোয়া হবে না। কারণ বিনা কারণে তিন মাইলের বেশি দূরে লাশ স্থানান্তর করা মাকরুহ। তাই হয়তো মক্কাতেই শোতে হবে নয়তো সুন্নাতের খেলাফ করে মদিনায় লাশ আনতে হবে। কোনোটাই করার অনুমতি দিতে রাজি নন তিনি। তাই আর কতদিন বাঁচবেন জানার খুব ইচ্ছা হলো। আল্লাহর কাছে দোয়া করলেন যেন জানিয়ে দেন তাঁর বাকি হায়াতের কথা। সত্যি সত্যিই একরাতে স্বপ্ন দেখলেন নবী (সা.) এসে তাঁকে হাতের পাঁচ আঙ্গুল দেখিয়ে চলে গেলেন। ঘুম থেকে উঠে খুব খুশি হলেন তিনি পাঁচ সংখ্যা জানতে পেরে। কিন্তু পরক্ষণেই আবার চিন্তায় পড়ে গেলেন, পাঁচ সংখ্যার দ্বারা নবী (সা.) কি বোঝালেন। পাঁচ বছর, না মাস, না সপ্তাহ, নাকি দিন? কোনোটাই তো স্পষ্ট নয়। পাঁচের দ্বারা যদি উদ্দেশ্য হয় দিন, তাহলে তো হজ করে আসা সম্ভব হবে না। তাই পাঁচের ব্যাখ্যা জানতে তিনি এবার রীতিমতো কৌতূহলী হয়ে উঠলেন।

সে যুগে স্বপ্নের নির্ভুল তাবির করতেন আল্লামা ইবনে সিরীন (রহ.)। তার কাছে তাবির জানতে লোক পাঠালেন। ইবনে সিরীন স্বপ্নের ব্যাখ্যায় বললেন, আল্লাহপাক পাঁচটি বিষয়ের জ্ঞান কাউকে দেননি। তিনি হয়তো সে পাঁচ বিষয়ের কোনো একটি জানতে চেয়েছিলেন। সেটা যে জানা সম্ভব না সেদিকেই ইঙ্গিত দিলেন নবী (সা.)। নবী ও নবীর শহর মদিনাপ্রেমিক ইমাম মালেকের (রহ.) মতো আরও অনেক আল্লাহপ্রেমিক ব্যক্তি রয়েছেন। আল্লাহপাক আমাদের প্রকৃত নবীপ্রেমিক বানিয়ে দিন। আমীন।

লেখক : খতিব, বায়তুল মারুফ জামে মসজিদ, টিভি রোড, রামপুরা, ঢাকা।

ধর্ষণ প্রতিরোধে ধর্মীয় মূল্যবোধ

imagesমোহাম্মাদ রেজাউর রহমান: ‘ধর্ষণ’ বেশ কিছু দিন ধরে আমাদের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। যদিও আমাদের এই সমাজ কখনই এর কলঙ্কমুক্ত ছিল না, তবে দিল্লির ঘটনার পর আমাদের দেশেও ঘটে যাওয়া কিছু পাশবিকতার কারণে আমরা অনেকটা নড়েচড়ে বসেছি। নর-নারীর সহ অবস্থানে সমাজ যেখানে এগিয়ে যাওয়ার কথা সেখানে ধর্ষণের মতো কিছু অপরাধের কারণে পুরুষের ওপর তৈরি হচ্ছে নারী মনে এক ধরনের ঘৃণা- যা কিনা পুরুষ বিদ্বেষেও রূপ নিচ্ছে কিছু কিছু ক্ষেত্রে।

পর পর এমন কিছু অঘটন ঘটে যাওয়ার পর অনেকেই আবার খুঁজে ফিরেছেন কিছু সমাধান, যাতে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা আর না ঘটে, অনেকে আবার নিজের মতামত তুলে ধরেছেন ধর্ষকের শাস্তি কিভাবে হওয়া উচিত সে সম্পর্কে।

মূল কথায় আসি। ধর্ষণের সঙ্গা আমরা সবাই জানি। সহজ কথায়-ধর্ষণ বলতে এক চরম পাশবিক ও বিকৃত যৌন নির্যাতনকে বোঝায়। যা একই সঙ্গে অশ্লীলতা, বিকৃত মানষিকতা ও কুশিক্ষার ফলাফল হিসেবেই আমরা দেখে থাকি।

আর সমাজ থেকে এই অশ্লীলতাপূর্ণ অমানবিক নির্যাতন নির্মূল করা শুধুমাত্র আইন করে সম্ভব নয়, দরকার মানুষের ধর্মীয় মূল্যবোধের বিকাশ। নৈতিকতার অবক্ষয়ের কারণে সমাজ আজ যে অভিশাপে ভুগছে তা থেকে উত্তরণের জন্য আমাদের ইসলামের দারস্থ হতেই হয়।

ইসলামে রয়েছে নারীর মর্যাদা ও অধিকার রক্ষায় সুনির্দিষ্ট নীতিমালা। শুধু তাই-ই নয়, একজন পুরুষ একজন নারীর দিকে কোন দৃষ্টিতে তাকাবে সে কথাও পবিত্র কুরআনে আলোচিত হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘মুমিন পুরুষদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে ও তাদের লজ্জাস্থানের হিফাজত করে।’ (সূরা : নূর-৩০)

পরের আয়াতে একই ভাবে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা নারীদেরও এভাবে সতর্ক করে দিয়েছেন, ‘মুমিন নারীদের বলুন, তারা যেন দৃষ্টিকে সংযত করে ও তাদের লজ্জাস্থানের হিফাজত করে।’ (সূরা : নূর-৩১)

সমাজে এই ধরনের ন্যাক্কারজনক কাজ এমনি এমনি ঘটে না। পেছনে অবশ্যই কোনো কারণ থাকে। আর কারণ হিসেবে আমরা নৈতিকতার অবক্ষয়কেই দায়ী করি যা কিনা বিভিন্নভাবে ঘটে। আমাদের সমাজ তো মানুষের পশুত্বকে জাগিয়ে তোলার উপাদানে পরিপূর্ণ। বিজ্ঞাপন থেকে শুরু করে নানা ক্ষেত্রে নারীর স্বল্প বসন আর যাই হোক আমাদের তরুণ সমাজের কাছে কোনো শুভ ইঙ্গিত পৌঁছায় না। এই অশ্লীলতার ব্যাপারে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা সতর্ক করে বলেছেন ‘যারা মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতা কামনা করে, তাদের জন্য আছে দুনিয়া ও আখিরাতে কঠিন শাস্তি।’ (সূরা নূর: আয়াত ১৯)

তবে পুরুষের পাশাপাশি নারীদেরও সতর্ক হতে হবে। এ বিষয়ে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা সতর্ক করে বলেছেন, ‘মুমিন নারীরা যেন সাধারণত যা প্রকাশ থাকে তা ব্যতীত তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে, তাদের গলা এবং বুক যেন মাথার কাপড় দ্বারা আবৃত করে।’ (সূরা নূর : ৩১)

আল্লাহ আরও বলেছেন, ‘জাহিলিয়া যুগের মতো সাজসজ্জা করে রাস্তায় বের হয়ো না।’ (সূরা : আহজাব-৩৩)

তবে এর পরেও যদি কেউ নির্যাতিত হয় তাহলে তার কোনো দায়ভার নাই। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, ‘যে তাদের ব্যভিচারে বাধ্য করে তাহলে তাদের জবরদস্তির পর আল্লাহ তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সূরা নূর : ৩৩)

ইসলামে ধর্ষকের কঠিন শাস্তির বিধান রয়েছে।

আমরা একটি সুন্দর বাসযোগ্য সমাজ চাই, যেখানে কোনো মানুষকে আর নির্যাতিত হতে হবে না, আর সেই লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য আমাদের সবাইকে ন্যায় নীতির ভিত্তিতে এক সঙ্গে কাজ করে যেতে হবে, সব অপরাধের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে।

চান্দিনায় চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা

11ccandina picture 04-05-13মো. আবদুল বাতেন: চান্দিনা উপজেলা সদরের ব্যবসায়ীরা চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। শনিবার দুপুরে (৪ মে) প্রচন্ড কালবৈশেখী ঝড় হয়। ব্যবসায়ীদের ক্রয়-বিক্রয় ছিল কম। কিন্তু এরই মধ্যে চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ হয়ে পরে ব্যবসায়ীরা।

বিকেলে ৪টি হাতি নিয়ে একদল অসাধু ব্যক্তি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজি করে। এসময় কোন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান তাদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি। ১০-৫০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা তুলা হয়। ১০টাকার কম দিলে টাকা নেওয়া হয়নি। এদিকে দুপুরে একদল হিজরা বাজারে চাঁদা তুলে। একই দিন সকালে একটি মাজারের নামে সিএনজি অটোরিক্সা যোগে মাইকিং করে টাকা তুলেন এক ব্যক্তি।

ধর্মপ্রাণ মানুষের ধর্মীয় অনুভূতি কাজে লাগিয়ে ওই চাঁদা তুলা হয়। ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, ক্রয়-বিক্রয় ভাল না হলেও নানা কারনে চাঁদা দিতে বাধ্য হয়েছেন তারা।

ডিজিটাল ব্যাংক ডাকাতি

ATM Cardhacker1205bআইটি ডেস্ক: এক হ্যাকার গ্রুপ প্রি-পেইড ডেবিট কার্ড ডেটাবেইস হ্যাক করে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের এটিএম বুথ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে দুই কোটি ৯০ লাখ ডলার। প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট অরেঞ্জ নিউজ এক প্রতিবেদনে জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের আইনজীবীরা সম্প্রতি ঘটা হ্যাকিংয়ের ঘটনাটি নিশ্চিত করেছেন।

এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রে সাত জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানা গেছে। হাজার হ্যাকার ভুয়া চৌম্বক কার্ড ব্যবহার করে অর্থ তুলে নেয়। যুক্তরাষ্ট্রের ব্রুকলিনের আইনজীবী লরেটা লিঞ্চ হ্যাকিংয়ের এ ঘটনাকে একুশ শতকের সবচেয়ে বড় ব্যাংক ডাকাতি হিসেবে অভিহিত করেছেন।

হ্যাকাররা ব্যাংক ডেটাবেইস হ্যাক করে প্রি-পেইড ডেবিট কার্ডের অর্থ উত্তোলন সীমায় পরিবর্তন করে এবং অ্যাকসেস কোড বানিয়ে নেয়। তারপর সব ডেটা চৌম্বক কার্ডে নিয়ে নেয়। এতে করে সচল অ্যাকাউন্টের সব তথ্য তাদের চৌম্বক কার্ডে চলে আসে। পরবর্তীতে ওই কার্ডগুলো দিয়ে তারা টাকা হাতিয়ে নেয়।

ব্যাঙের আবার বিয়ে!

frog-marriage-300x194বিচিত্র ডেস্ক: মানুষ ছাড়া অন্য কোন প্রাণীর বিয়ের কথা কি শুনেছেন কখোনো? ভাবছেন এ তো শুধু কল্প কাহিনীতেই সম্ভব। না, বাস্তবেও ঘটছে এমন ঘটনা। নিয়মিত ব্যাঙের বিয়ে হচ্ছে বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে। যেনতেনভাবে নয়, একেবারে ঘটা করেই হচ্ছে এসব বিয়ে।

কোন কোন এলাকার মানুষের বিশ্বাস, বৃষ্টির সঙ্গে ব্যাঙের বিশেষ সম্পর্ক আছে। বৃষ্টি নামার বিষয়টিও আঁচ করতে পারে প্রাণীগুলো। বের হয়ে আসে গর্ত থেকে। জলে খেলাধুলা করে। ঘ্যানর ঘ্যানর শব্দ করে আনন্দ প্রকাশও করে থাকে। অর্থাৎ বৃষ্টি হলে ব্যাঙ খুব খুশি হয় বা প্রাণীটিকে খুশি করতেই বৃষ্টি নামে।

এজন্য নানাভাবে ব্যাঙকে খুশি করার চেষ্টা করে থাকেন তারা। এরই অংশ হিসেবে এদের বিয়েও দেয়া হয়।

কলেজে ভর্তি নিয়ে উদ্বিগ্ন কুমিল্লার শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা

কুমিল্লার বার্তা রিপোর্ট: ভালো ফলাফল অর্জন করার পর প্রত্যেক শিক্ষার্থীরই আশা জন্মে ভালো কলেজ বিশেষ করে সরকারি কলেজে ভর্তি হওয়ার। এ আশা শুধু শিক্ষার্থীদেরই নয় অভিভাবকদেরও। শিক্ষা ও সংস্কৃতির পাদপীঠ বলে খ্যাত কুমিল্লার শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে এ আশা পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণার পর বেড়ে যাওয়া খুবই স্বাভাবিক।

কিন্তু সে স্বাভাবিকতা এখন অস্বাভাবিকতায় পরিণত হয়েছে। এবারের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল অনুযায়ী কুমিল্লার মেধাবী পরীক্ষার্থীই সরকারি কলেজগুলোতে ভর্তি হওয়া নিয়ে আশংকার সৃষ্টি হয়েছে। এর কারণ জিপিএ-৫ প্রাপ্ত পরীক্ষার্থীর সংখ্যার চেয়ে অনেক কম ভর্তি আসন রয়েছে সরকারি কলেজগুলোতে।

জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ব্যতিত এ+, এ-সহ সাধারণভাবে উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীদেরও আশা থাকে সরকারি কলেজে ভর্তি হওয়ার। এক্ষেত্রে আশা অরণ্যরোদন বৈ কিছু নয়। এমন পরিস্থিতিতে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের চরম হতাশা দেখা দিয়েছে। আসন সংকটের কারণেই এ অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতির শিকার হতে হবে মেধাবী শিক্ষার্থীদের। এ বছর কুমিল্লা বোর্ডের অধীন জিপিএ-৫ প্রাপ্ত পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৭ হাজার ৮শ ৫৫জন।

অন্যদিকে কুমিল্লার ৩টি সরকারি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির আসন সংখ্যা ২ হাজার ১শ। এ অবস্থায় মেধাবী তালিকায় শীর্ষ তথা জিপিএ-৫ প্রাপ্ত পরীক্ষার্থীদের এক তৃতীয়াংশও সরকারি কলেজগুলোতে ভর্তি হতে পারবে না। এর চেয়ে কম শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতে পারবে। বঞ্চিত হবেন অধিকাংশ মেধাবী। মেধাবী পরীক্ষার্থী ব্যতীত পরীক্ষায় উর্ত্তীণ হওয়া সাধারণ পরীক্ষার্থীদের সরকারি কলেজে ভর্তি হওয়ার স্বপ্নতো রীতিমতো আকাশ কুসুম কল্পনা। ভালো ফলাফল করেও সরকারি কলেজে ভর্তি না হওয়ার আশংকায় ইতোমধ্যে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হয়েছে।

11cacomilla photo 1-09-05-13জানা যায়, কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডের অধীন ৬টি জেলায় মোট জিপিএ-৫ প্রাপ্ত পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৭ হাজার ৮শ ৫৫জন। এর মধ্যে কুমিল্লা জেলা থেকে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১ হাজার ৭শ ৭জন। বাকি ৫টি জেলা থেকে মোট জিপিএ-৫ প্রাপ্ত পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১ হাজার ৫০জন। কুমিল্লায় ১১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে মোট জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ১ হাজার ৭শ ৭জন পরীক্ষার্থীদের মধ্যে কুমিল্লা জিলা স্কুলের ৩শ ৩২জন, নবাব ফয়জুন্নেছা সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের ২শ ২৪জন, কুমিল্লা মডার্ণ হাই স্কুলের ৪শ ৩০জন, কুমিল্লা ক্যাডেট কলেজের ৫৩জন, ইস্পাহানী পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের ১শ ৫৪জন, ইবনে তাইমিয়া স্কুল এন্ড কলেজের ৩শ ২জন, আওয়ার লেডি অব ফাতিমা গার্লস হাই স্কুলের ৬৫জন, কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ড মডেল কলেজের ৩৪জন, হোমনা সরকারি হাইস্কুলের ৩১জন, কুমিল্লা ক্যান্টনম্যান্ট হাই স্কুলের ৬০জন ও অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ২২জন রয়েছে।

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো: আবুল কাশেম মিয়া জানান, এ কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ৩টি বিভাগে মোট ২ হাজার ১শ শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। কুমিল্লা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ড. একেএম আছাদুজ্জামান জানান, একাদশ শ্রেণিতে ৩টি বিভাগে ৯শ শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে।

কুমিল্লার বার্তা ডট কমকে একই কথা বলছেন কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ইন্দু ভূষণ ভৌমিক। কুমিল্লায় আরও ১টি সরকারি কলেজ ও ১টি সরকারি মহিলা কলেজ স্থাপনের দাবি কুমিল্লাবাসীর দীর্ঘদিনের হলেও এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে ভর্তির সংকট দিন দিন আশংকাজনকভাবে বেড়ে চলেছে।

সাগর তলে ‘আটলান্টিস’ মহাদেশের সন্ধান!

Atlantis-Outline-sm20130508101838আন্তর্জাতিক ডেস্ক: জাপানের একটি সাবমেরিন ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরো`র নিকটবর্তী সমুদ্র তলদেশে গ্রানাইটের সন্ধান পেয়েছে, যা থেকে ধারণা করা হচ্ছে হারিয়ে যাওয়া মহাদেশ আটলান্টিসের অবস্থান সম্ভবত আটলান্টিক মহাসাগরেই ছিল। জাপান এজেন্সি ফর মেরিন আর্থ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি এবং ব্রাজিলিয়ান সরকার এ কথা জানিয়েছে।

ব্রাজিলের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, গ্রানাইট সাধারণভাবে শুষ্ক ভূমিতেই তৈরি হয় -ফলে আটলান্টিসের অস্তিত্ব সম্পর্কে এটিকে একটি বড় প্রমাণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। তিনি জানান, প্লেটোর তত্ত্ব অনুযায়ী আটলান্টিসের এখানেই অবস্থান করার কথা।

কিংবদন্তি অনুসারে, আটলান্টিসের একটি উন্নত মানবসভ্যতা ১২ হাজার বছর আগে সমুদ্রে নিচে তলিয়ে যায়। এরপর তা সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।

জাপানি সংস্থাটি অনুসন্ধানে শিনকাই ৬৫০০ সিরিজের সাবমেরিন ব্যবহার করে। ধারণা করা হচ্ছে, সমুদ্রের নিচে পাওয়া গ্রানাইট অন্তত কয়েক লক্ষ বছর আগে সমুদ্রে ডুবে গিয়েছিল। তবে সেখানে মানুষের হাতে তৈরি কোনো বস্তুর সন্ধান পাওয়া যায়নি।

এই প্রথম মানুষ নিয়ে কোনো সাবমেরিন দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরে অনুসন্ধান চালালো।

গত এপ্রিলে জাপান এজেন্সি ফর মেরিন আর্থ সায়েন্স রিও ডি জেনিরোর প্রায় ১০০০ কিমি দক্ষিণ-পূর্বে একটি বিশেষ ধরনের ডিভাইস ব্যবহার করে রিও গ্র্যান্ডির উত্থান পরিমাপ করে। সমুদ্রের ৯১০ মিটার গভীরে ১০ মিটার উঁচু ও চওড়া খাড়া ঢালের অস্তিত্ব দেখতে পান।

বিস্তারিত বিশ্লেষণের পর দেখা যায় সেখানে বিপুলপরিমাণ স্ফটিক বালুও রয়েছে -এই উপাদানটিও সাগরে উৎপন্ন হয় না। ধারণা করা হচ্ছে, অঞ্চলের তলদেশের অংশটি মূলত ব্যাসল্ট নামের এক জাতীয় কৃষ্ণধূসর আগ্নেয়শিলা দিয়ে তৈরি।

১০ কোটি বছর আগে যখন দক্ষিণ আমেরিকা ও আফ্রিকা পৃথক হয়ে যায় সে সময় আটলান্টিসের অংশটুকু মাঝে পৃথক হয়ে রয়ে গিয়েছিল। এজেন্সি ফর মেরিন আর্থ সায়েন্স-এর ধারণা মতে এই অঞ্চলটি পাঁচ কোটি বছর আগেও সাগরের উপরে ছিল। এরপর আস্তে আস্তে তা সাগরবক্ষে তলিয়ে যায়। সমুদ্রের নিচে প্রাপ্ত ফসিল থেকে অনুমান করা হচ্ছে তলিয়ে যাওয়ার সময়টি কয়েক লাখ বছর ধরে স্থায়ী হয়।

রিও গ্রান্ডির উত্থানটিই হলো এ অঞ্চলের একমাত্র সম্ভাব্য শুষ্ক স্থান অর্থাৎ যে স্থানটি কোনো এক সময়ে শুষ্ক ছিল।

অবশ্য বিশেষজ্ঞরা এখনই এ নিয়ে কোনো উপসংহারে যেতে রাজি নন। জাপানের গিফু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শিনিচি কাওয়াকামি বলেছেন, “দক্ষিণ আমেরিকা এবং আফ্রিকা মিলে একটি বিশাল মহাদেশের সৃষ্টি করেছিল। ভূ-গর্ভস্থ টেকটনিক প্লেটের নড়াচড়ার ফলে তারা পৃথক হয়ে যায় -এর ফলে ঐ অঞ্চলটি সমুদ্রে রয়ে গিয়ে থাকতে পারে।”

তিনি বলেন, “আটলান্টিসের ধারণাটি আধুনিক ভূবিদ্যার বহু আগে থেকেই প্রচলিত রয়েছে। আমাদের এখনই আটলান্টিস নিয়ে কোনো উপসংহারে পৌঁছানো উচিত নয়।”

জাতীয় ট্র্যাজিডি অতঃপর রাজনৈতিক সংকট

11cbSavar-Photo 03052013সালাহউদ্দীন আহমদ: সাম্প্রতিকের ঘটনাপ্রবাহ আমাকে ভীষণভাবে আলোড়িত করছে। ২৪ এপ্রিল সাভারে একটি ভবন ধসে পাঁচটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির শতশত শ্রমিক নিহত হয়েছেন। ভেঙে পড়া ভবনের ধ্বংসস্তূপ সরাতে গিয়ে প্রতিদিনই মিলছে লাশ। এরকম একটি বিশাল বড় জাতীয় ট্র্যাজিডির মধ্যে আমরা কঠিন একটি সময় পার করছি।

অস্বীকার করার উপায় নেই যে, সামান্য কয়েকজন লোকের লোভের ফলে এমন ঘটনা ঘটেছে। রানা প্লাজার মালিক ভবনটি তৈরিতে অনিয়ম করেছে নিজের স্বার্থেই। আর এরকম একটি ভবনে নিজেদের গার্মেন্টস স্থাপন করে মালিকরা তাদের লোভীমনের পরিচয় রেখেছে। এরা সব নিকৃষ্টতম অপরাধী।

আমাদের দেশে এ ধরনের ঘটনা যে নতুন তাও নয়। গত কয়েক বছর ধরেই এমন ঘটনা ঘটেছে। আগুন লাগা বা ভবধসের মতো দুর্ঘটনায় শত শত মানুষ মারা যাচ্ছেন। কয়েক মাস আগে তাজরীন ফ্যাশনস নামের একটি গার্মেন্টসের অগ্নিকাণ্ডে দেড়শ মানুষের মৃত্যু আমাদের কাঁদিয়েছে, ভাবিয়েছে। আমরা একটি প্রশ্নের মুখোমুখী দাঁড়িয়েছি, এভাবেই কি চলতে থাকবে? অতিলোভীরা চাচ্ছে গার্মেন্টসে অনেক কম টাকা খরচ করে প্রচুর মুনাফা করতে। সরকার যদি এসব লোভীদের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নিত তবে এরা সাহস পেত না।

সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর দায়িত্ব হচ্ছে বিল্ডিং কোড মেনে একটি ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে কিনা তা দেখা যাতে ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো যায়। প্রতিটি পোশাক কারখানা সব শর্ত মেনে শ্রমিকদের কাজের উপযোগী পরিবেশ ও নিরাপত্তা দেওয়ার মতো করে এগুচ্ছে কিনা সেটি দেখাও সরকারেরই কর্তব্য। এসব জায়গায় সরকারের যথোপযুক্ত পদক্ষেপ না থাকায় দুর্ঘটনা ঘটছে। এ মুহূর্তে রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপের মধ্যে দাঁড়িয়ে আমাদের এসব পদক্ষেপ নিতে হবে।

পাশাপাশি শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার থাকাটাও জরুরি ছিল। পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের এখন এ অধিকার দিতে হবে। তবে এ জন্য কিছু সতর্ক পদক্ষেপ দরকার। যেমন, কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন করবেন সত্যিকারের শ্রমিক, বাইরের কেউ নয়। প্রকৃত শ্রমিক যখন কারখানায় তার অধিকার বুঝে পাবেন, তখন তিনি কারখানা ও শ্রমিক উভয়ের স্বার্থে কাজ করবেন। সে ক্ষেত্রে শ্রমিকের এ অধিকার নিয়ে অন্য কারও ফায়দা লোটার সুযোগ থাকবে না।

আমাদের মনে রাখতে হবে, পোশাক কারখানার শ্রমিকরা দাস নন। তাদের দাসের মতো বিপদের ঝুঁকির মধ্যে কাজ করতে বাধ্য করা সভ্যতার পরিপন্থী। এ জন্যই এ ধরনের কাজ যে মালিকরা করছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। আরেকটি কথা, রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানা এভাবে বিধিমালা না মেনে ভবন নির্মাণ করার সাহস কোথায় পেয়েছে? নি:সন্দেহে তার পৃষ্ঠাপোষক হিসেবে আলোচিত-সমালোচিত স্থানীয় সংসদ সদস্য। এতবড় দুর্ঘটনার পর তাকেও কেন বিচার বা আইনের আওতায় আনা হল না, সে প্রশ্নও রয়ে যাবে।

সাভার ট্র্যাজিডি আমাদের এতসব নেতিবাচক ঘটনার মধ্যেও ইতিবাচক অনেক কিছু দেখিয়েছে। সবচেয়ে বেশি দেখেছি আমরা এ ঘটনা যে, উদ্ধারকারী বাহিনীগুলোর সঙ্গে কাধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছেন সাধারণ মানুষ। প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে তারা ধসে পড়া ভবনের মধ্যে জীবনের সন্ধান করেছেন। হাজার হাজার মানুষকে জীবিত উদ্ধার করা গেছে সাধারণ মানুষের এ স্বত:স্ফূর্ত অংশগ্রহণে।

এমনকি এভাবে ঝুঁকি নিতে গিয়ে উদ্ধারকারীদের অনেকেই আহত হয়েছেন। একজনের আঘাত গুরুতর ছিল বলে তাকে সিঙ্গাপুরে নিয়ে গেলে তিনি সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। মনুষ্যত্ববোধ আসলে প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই রয়েছে। দেশপ্রেমও প্রত্যেকের অমূল্য চেতনা। আমি সে মানুষদের শ্রদ্ধা জানাই যারা দুর্গতদের উদ্ধারে সময় ও শ্রম দিয়েছেন। নিহত ওই উদ্ধারকর্মীর প্রতি আমার বিনম্র শ্রদ্ধা।

উন্নত দেশের মানুষ কিন্তু এ ধরনের জাতীয় ট্র্যাজিডিতে মিলেমিশে কাজ করেনা আমাদের দেশে অবস্থা ভিন্ন। এতবড় একটি দুর্ঘটনার শোক আমরা এখনও সামলে উঠতে পারিনি, ধ্বংসস্তূপ সরানো হচ্ছে আর সেখান থেকে উদ্ধার হচ্ছে লাশ। এমন এক সময়ে রাজনীতিবিদরা রাজনীতির মাঠ গরম করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। আমাদের রাজনীতি আসলে এখন এতবেশি নিম্নমানের হয়ে গেছে যে আমরা মনুষ্যত্ববোধও হারিয়ে ফেলেছি।

আর এর ফলেই রাজনীতির ময়দানে নানা ধরনের ঘটনায় দেশ আবার অনিশ্চয়তায়। ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখব, আমাদের দেশে ইসলাম এসেছে সুফীদের হাত ধরে। তাই সুফীবাদের প্রভাবে আমাদের দেশে ইসলামের মধ্যে এক ধরনের উদারতা রয়েছে। সবার সঙ্গে মিলেমিশে যার যার ধর্ম ও সংস্কৃতি নিয়ে টিকে থাকা এটাই হল এ ভূখণ্ডের বৈশিষ্ট্য।

একাত্তরের আগে পাকিস্তানের দুই যুগের শাসনামলেও আমরা দেখেছি, আমাদের চেতনার মধ্যে ছিল ধর্মনিরপেক্ষতা। এটা এভাবে প্রকাশ্যে বলা না হলেও স্বাধীনতার জন্য আন্দোলনের অর্ন্তনিহিত তাৎপর্য ছিল ধর্মনিরপেক্ষতা। শব্দটির অর্থ কিন্তু সংকীর্ণ নয় যেভাবে অনেক সময় একে উপস্থাপন করা হয়। ধর্মনিরপেক্ষতার প্রথম কথা হল, ধর্ম ও রাষ্ট্রকে আলাদা রাখতে হবে। আমরা কিন্তু সবসময় এ দুটিকে এক করেছি। গোঁজামিল দিয়েছি। ফলে ধর্ম ও রাজনীতি দুটোই কলুষিত হয়েছে।

আমাদের তাই এখন এসব নিয়ে ভাবতে হবে। পাকিস্তান ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র বরাবরই, আমাদেরটি তা নয়। এখানে শিক্ষাকে সবার আগে ধর্মনিরপেক্ষ করতে হবে। আধুনিক একমুখী শিক্ষাব্যবস্থার বিকল্প নেই। মাদ্রাসা শিক্ষা বহাল রেখে এটা অর্জন করা সম্ভব নয়। আমরা গত চার দশকে মান্ধাতার আমলের মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থাকে বাতিল করা তো দূরের কথা, একে যথেষ্ট শক্তিশালী করেছি।

এর ফল কী হয়েছে তা এখন দেখাই যাচ্ছে। ৫ মে ধর্মভিত্তিক একটি দল হেফাজতে ইসলাম ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি দিয়েছিল। তারপর ঢাকার প্রাণকেন্দ্র মতিঝিলের শাপলা চত্বরে সমাবেশ করেছে তারা। সমাবেশ শেষে এরা সেখানে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করলে সরকারকে সেটি পণ্ড করতে হয়েছে। ৫ মে রাতের পুলিশি অভিযানের সময় জানা গেল, মাদ্রাসার হাজার হাজার অনাথ শিশুকে ওরা ব্যবহার করেছে। আঠার বছরের নিচে বয়সী এ শিশুদের মগজ এমনভাবে ধোলাই করা হয়েছে যে এরা প্রাণের মায়া ত্যাগ করে এত ঝুঁকির মধ্যে ঢাকায় এসেছে, অবস্থানে অংশ নিয়েছে। রাজনৈতিক নেতারা তাদের অপব্যবহার করছে।

দেশের বর্তমান রাজনৈতিক সংকট খুবই গভীর সন্দেহ নেই। আমি এ জন্য বলব, এ থেকে ত্রাণ পেতে হলে সবাইকে শান্তিময় পথে এগুতে হবে। শক্তি নিয়ে কখনওই কোনো সমস্যার সমাধান করা যায়নি। রাজনীতিতে সুস্থতা ফিরিয়ে আনতে হলে জনমত সৃষ্টি করতে হবে। কোনো রকম ইগো রাখা যাবে না।

আত্মসমালোচনা, আত্মজিজ্ঞাসা ও আত্মশুদ্ধির বিকল্প নেই। নিজেদের প্রশ্ন করতে হবে, করে জানতে হবে কেন এসব ঘটছে। পরস্পরকে দোষারোপ করতে থাকলে ভুল বোঝাবুঝি শুধু বাড়বেই। তাই সেসব বাদ দিয়ে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সংকট উত্তরণের পথ খুঁজতে হবে।

আমি আশা করব, প্রার্থনাও করব সবার শুভবুদ্ধির উদয় হবে।

ড. সালাহউদ্দিন আহমদ : জাতীয় অধ্যাপক, গবেষক ও প্রাবন্ধিক।

কুমিল্লায় অবৈধ হজ্ব এজেন্সির ছড়াছড়ি: হজ্বযাত্রী সংগ্রহে দালাল নিয়োগ

Hazএইচ খান: কুমিল্লায় হজ্ব ট্রাভেলগুলোর নিয়োজিত দালালরা হজ্বযাত্রী সংগ্রহে কুমিল্লার প্রত্যন্ত অঞ্চলে চষে বেড়াচ্ছেন। কোন ট্রাভেলস সরকারী অনুমোদন রয়েছে, কোনগুলো প্রতারক তা বুঝা বড়ই কষ্টসাধ্য বিষয়। হজ্বের টাকা জমার সময় যত কমে আসছে ততই তাদের তৎপরতা বাড়ছে।

তারা যেমন সরাসরি হজ্ব গমনেচ্ছুদের কাছে ধরনা দিচ্ছে তেমনি স্থানীয় ইমাম-মুয়াজ্জিন এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মাধ্যমে এ কাজ করছে। অনেক এলাকায় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘হজ কাফেলা’ নাম দিয়ে বড় বড় ব্যানার টাঙিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছে। তাদের দৌরাত্ম্যের সরকারী অনুমোদিত এজেন্সিগুলোও অসহায়।

এক দিকে যেমন সরকারি ব্যবস্থাপনার হজ্বযাত্রী প্রতি বছরই কমে যাচ্ছে, তেমনি বেসরকারি এজেন্সিগুলো ঘোষিত প্যাকেজ মূল্য থেকে অনেক কমে হজ্বযাত্রী পাঠানোর কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে। ফলে হাজ্বীরা যথাযথ সেবা থেকে যেমন বঞ্চিত হচ্ছেন তেমনি যাতায়াত, থাকা খাওয়াসহ সব ক্ষেত্রেই বিভিন্ন ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

হজ্বমেলার মাধ্যমে সচেতনতা সৃষ্টি, এজেন্সির একাউন্টে সরাসরি টাকা জমার নিয়ম এবং পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে সতর্ক করার মতো পদক্ষেপগুলোও কাজে আসছে না। দালালদের দৌরাত্ম্য বৃদ্ধির কথা স্বীকার করে হজ এজেন্সি সমূহের সংগঠন এ নিয়ে উদ্বিগ্ন।

জানা যায়- কুমিল্লায় সরকারী অনুমোদনহীন লাইসেন্স নেই এমন এজেন্সি রয়েছে ২৫টি এবং অনুমোদন ও স্থায়ীভাবে রয়েছে ২টি এজেন্সি।  চলতি বছরের হজের টাকা জমার সরকার নির্ধারিত সময় ২৫ জুন। তবে সরকারী অনুমোদনহীন এজেন্সিগুলো ২০ জুনের মধ্যে টাকা জমার সর্বশেষ সময় নির্ধারণ করেছে। তাদের হজ্বযাত্রীদের নামের অনুকূলে টাকা জমার ব্যাংক বিবরণসহ তালিকা ২৫ জুনের মধ্যে জমা দিতে হবে।

কুমিল্লায় প্রায় ১০/১৫টি হজ্ব ট্রাভেলস এজেন্সি কার্যালয় রয়েছে। এসব কার্যালয় ছাড়াও বিভিন্ন মসজিদের ইমাম, মোয়াজ্জিমসহ বিভিন্ন দালালদের মাধ্যমে হজ্বযাত্রী বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে তাদেরকে এজেন্সির কাছে নিয়ে আসা হয়। তাদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দেখানো। দালালের অর্থসহ প্রায় অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে হজ্ব এজেন্সিগুলো। দালালরা তারা নিজ নিজ এলাকায় হজ্বযাত্রী সংগ্রহের পাশাপাশি আগেভাগেই এজেন্সির সাথে কথা বলে রাখছে।

অনেক দালালকে এজেন্সির সাথে দরকষাকষি করতে গিয়ে হজ্বযাত্রীদের বিভ্রান্তির মধ্যে ফেলে দিচ্ছে। একেক দালাল একেক সংখ্যক হজ্বযাত্রীর ব্যাপারে কথা বলছে। কুমিল্লার প্রতিটি হজ্ব ট্রাভেলস এজেন্সির নিয়োজিত রয়েছে প্রায় ১০ জন থেকে শুরু করে ১০০ জন হজ্বযাত্রী সংগ্রহকারী দালাল।

সূত্র জানায়, কুমিল্লায় বেশ কয়েকবার দালালদের একটি তালিকা আগে করা হয়েছিল। তবে নতুন তালিকায় ১’শ জনের মতো দালালের নাম স্থান পেয়েছে।

তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ ধরনের দালাল মধ্যস্বত্বভোগীদের সংখ্যা ২’শ ছাড়িয়ে যাবে। হজ্বযাত্রী সংগ্রহের কাজটি অতি লাভজনক হওয়ায় মাদরাসা শিক্ষক, ইমাম মুয়াজ্জিনের প্রতি ঝুঁকে পড়েছেন। তারা নিজ নিজ মসজিদ বা প্রতিষ্ঠান ও তার আশপাশের লোকদের নিয়ে হজের গ্র“প করছেন। এতে এক দিকে নিজে যেমন বিনা পয়সায় হজ্ব করছেন, অন্য দিকে প্রতি মওসুমেই বড় অঙ্কের টাকার মালিক হচ্ছেন, যা তার সম্মানী বা বেতনভাতা বাবদ প্রাপ্ত টাকার চেয়ে অনেক বেশি।

এ ধরনের লোকদের সঙ্গী হয়ে হজে গমনকারীরা ‘হজ্বের কাজ কষ্টের এবং এ কাজে ধৈর্য ধারণ করতে হয়’ ধরনের কথা শুনতে শুনতেই হজে যান। ফলে তাদের শত কষ্ট ও আর ভোগান্তির শিকার হয়েও কোনো কথা বলা বা অভিযোগ করার মতো মানসিকতা থাকে না। নিজেরা যে প্রকৃত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তাও অনেকে বুঝতে পারেন না।

হজযাত্রীদের দালালমুক্ত করার লক্ষ্যে এবার থেকে প্রত্যেক অ্যাজেন্সির একাউন্টে হাজীদের সরাসরি টাকা দেয়ার নিয়ম চালু করলেও তাও কাজে আসছে না। এটি কে কেউ আমলেই নিচ্ছে না। কারণ এটি কোনো বাধাই নয়। অ্যাজেন্সি মালিকেরা হজযাত্রীর নাম ঠিকানা পেলেই হলো, ওই নামে পুরো অঙ্কের টাকা নিজেরাই জমা দিচ্ছেন। কারণ নিজের অ্যাকাউন্টেই টাকা জমা দিচ্ছে। আর দালালদের কাছ থেকে নেয়া টাকার হিসাব থাকছে আলাদা।

আল তাওয়াফ ট্রূরস এন্ড ট্রাভেলস মালিক পেয়ার আহমেদ কুমিল্লার বার্তা ডট কমকে জানান- দালালদের দৌরাত্ম্যে হজ্ব কার্যক্রম চালানো কঠিন হচ্ছে। কারণ দালাল থেকে হাজ্বী না নিলে হজ্বযাত্রীই পাচ্ছে না কেউ। সরাসরি হজযাত্রী ২০ থেকে ৫০ জনের বেশি হচ্ছেন না। এ অবস্থায় বাধ্য হয়েই প্যাকেজমূল্য থেকে অনেক কমে দালালদের থেকে বুকিং নিতে হচ্ছে।

তিনি জানান, কুমিল্লা মাছ বাজারের ন্যায় সরকারী অনুমোদনহীন অহরহ এজেন্সি রয়েছে। রাজগঞ্জ বেশ কয়েকটি এজেন্সি হজ্ব যাত্রী নেওয়ার নামে সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে দালালদের মাধ্যমে হাজ্বীদের নিয়ে আসা হয়। তিনি আরও বলেন- সাবুরিয়া, বন্ধন, হাবিব ও ট্রাস্টসহ প্রায় ২৫টি হজ্ব এজেন্সির অনুমোদন নেই। সরকারীভাবে সর্বনিম্ন প্যাকেজমূল্য তিন লাখ তিন হাজার ৪৪০ টাকা। কুমিল্লায় কতিপয় এজেন্সি হাজীদের সরকারী নির্ধারিত ফি থেকে অনেক প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার টাকার মধ্যে হজ্ব করার প্রলোভন দেখিয়ে তাদেরকে আকৃষ্ট করছে।

কুমিল্লা আনাস ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরস এর বিরুদ্ধে দালালদের মাধ্যমে হজ্বযাত্রীদের প্রলোভন দেখিয়ে তাদের আকৃষ্ট করার অভিযোগ রয়েছে। তবে অভিযোগটি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকার আলহাজ্ব মনির হোসাইন পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন। প্যাকেজে ঘোষিত কমমূল্যে হাজী নেয়ার সুযোগ নেই। যদি প্রমাণ পাওয়া যায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তিনি বলেন, গ্র“পের মাধ্যমে কোন হজ্বযাত্রীদের নেওয়া হচ্ছে না। যারা স্বইচ্ছায় সরাসরি এজেন্স কার্যালয়ে আসবেন তাদেরকেই হজ্ব করানো হচ্ছে। তবে কোন দালালদের মাধ্যমে কোন হজ্বযাত্রী আমাদের এখানে নেই।

চৌদ্দগ্রামে চার বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত শতাধিক

দরঘটন55মোঃ এমদাদ উল্যাহ: ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বেপরোয়া গতিতে চলছে সিএনজি চালিত বেবি টেক্সিগুলো। অদক্ষ ও অশিক্ষিত চালকরা তাড়াতাড়ি গন্তব্যে পৌঁছতে টেক্সির গতি বাড়িয়ে দেয়। এতে দুর্ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলছে। শুধু মহাসড়কের চৌদ্দগ্রামের ৪৪ কিলোমিটার এলাকায় চার বছরে শতাধিক ব্যক্তি নিহত হয়েছে।

জানা গেছে, গত পাঁচ বছর ধরে প্রত্যন্ত অঞ্চলে সিএনজি বেবি টেক্সি বেড়েই চলছে। কমে গেছে জনসাধারণের পরিচিত রিক্সা। আর রিক্সা চালকরা অল্প কয়েকদিন প্রশিক্ষণ নিয়েই বেবি টেক্সি চালাচ্ছে। চালকদের বেশির ভাগই অদক্ষ ও অশিক্ষিত। ফলে তারা নিজেদের মনগড়া মতো টেক্সি চালাতে থাকে। গ্রামীণ সড়কের খানাখন্দকেও তারা বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালায়।

আর গ্রামীণ সড়ক থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে উঠার সময় দু’দিকের গাড়ি দেখে উঠে না। আবার অনেক চালক বেবি টেক্সি নিয়ে দ্রুতগামী বাসের সাথে প্রতিযোগিতা করে। এতে বেশির ভাগই দুর্ঘটনা ঘটে। এরমধ্যে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কয়েকটি ঘটনা হলো ; ফালগুনকরায় ঢাকাগামী অজ্ঞাতনামা গাড়ি চাপায় সিএনজি চালকসহ ৪ জন নিহত ও অপর ১ জন আহত হয়েছেন।

নিহতরা হলেন- সিএনজি চালক বাতিসার কালিকাপুর গ্রামের মকবুল আহমদের ছেলে আবদুল হক, যাত্রী চিওড়া ইউনিয়নের নোয়াপুর গ্রামের হাজী আবদুস সাত্তারের ছেলে আবুল খায়ের মিন্টু ও একই গ্রামের টুকু মিয়ার ছেলে বাচ্চু, মিয়া চাঁনের ছেলে রাসেল।

 সৈয়দপুর এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় সিএনজি বেবী টেক্সিচালকসহ ২ জন নিহত হয়েছে। নিহতরা হলো : টেক্সি চালক চৌদ্দগ্রামের কালিকাপুর ইউনিয়নের বদরপুর গ্রামের আমির হোসেনের ছেলে বাচ্চু মিয়া ও আরোহী পাশবর্তী কালিকাপুর গ্রামের ছেরু মিয়ার জামাতা ফেনীর এয়াকুব।

চিওড়া রাস্তার মাথায় ঢাকাগামী একটি কাভার্ডভ্যান একটি সিএনজি বেবি টেক্সিকে চাপা দিলে ১ জন নিহত ও চালকসহ একই পরিবারের ৫ জন আহত হয়। নিহতের নাম মায়েদা খাতুন। আহতরা হলো রিনা আক্তার, কালাম, খালেদা, পারভিন বেগম, ইস্রাফিল।

চন্ডিপুর এলাকায় অজ্ঞাতনামা গাড়ির চাপায় রুবেল নামের এক সিএনজি চালক নিহত হয়েছে। সে চিওড়া ইউনিয়নের ডিমাতলী গ্রামের মৃত সুরুজ মিয়ার ছেলে।

সরেজমিন কয়েকজন অভিজ্ঞ চালকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, অদক্ষ চালকরা টেক্সি চলমান অবস্থায় অনেক সময় মোবাইলে কথা বলে। ফলে সচেতন যাত্রীরা এখন মহাসড়ক এলাকায় সিএনজি বেবি টেক্সিতে উঠতে চান না। অদক্ষ চালকদের কারণে তাদেরও ক্ষতি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন।

তারা আরও বলেন, সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ শিগগিরই এব্যাপারে অভিযান পরিচালনা করে নাম্বারবিহীন বেবি টেক্সি জব্দ ও অদক্ষ চালকদের শাস্তি দিলে দুর্ঘটনা কিছুটা হলেও কমে যাবে।


জিপিএ-৫ পেয়েও কাঁদছে ফারুক

11cbFARUQE 005মো. শরিফুল আলম চৌধুরী: বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে দরিদ্র পরিবারের মেধাবী মো. ফারুক হোসাইন। তার বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার কাজিয়াতল গ্রামে। সে কাজিয়াতল রহিম-রহমান মোল্লা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে গত এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করেছিলো।

ভাল ফলাফলের জন্য সবাই যখন মিষ্টি মূখ করাচ্ছিল তখন সে মসজিদের পাশে খড়ের গাঁদায় বসে শুধুই কাঁদছিল। তার পিতা শাহজাহান মিয়া একজন হোটেল (মেসিয়ার) শ্রমিক। জিপিএ-৫ কি তা তার পিতা জানে না। সারাদিন কাজ করে যা মজুরি পান তা দিয়েই তাদের ৫ সদস্যের সংসার চলে।

ফারুকের বড় ভাই সুমনও গত ২০১২ সালের এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে বর্তমানে কানাডা প্রবাসী আওয়ামীলীগ নেতা আলহাজ্ব আকরামূল ইসলাম খানের সহযোগীতায় কুমিল্লা পলিটেকনিক ইন্সষ্টিটিউটে পূর কৌশল বিভাগে দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যয়ন করছে।

ফারুকের মা মমতাজ বেগম পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে মানুষের বাড়িতে ঝি এর কাজ করে। মূলত তার দেয়া টাকা ও আপ্রান চেষ্টা দিয়েই সে এবং তার বড় ভাই এতদূর পর্যন্ত এগিয়েছে।

ফারুক কুমিল্লার বার্তা ডট কমকে জানায়, এতদিন মায়ের সামান্য সহায়তায় ও প্রতিবেশিদের সহযোগীতায় খুবই কষ্ট করে লেখাপড়া করেছে সে। কিন্তু উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ানোর কোন সামর্থ্য আর তার মা-বাবার নেই। তাই তার লেখাপড়া বাদ দেয়া ছাড়া তার আর কোন উপায় নেই। কারো কোন সহযোগীতা পেলে ভবিষ্যতে উচ্চ শিক্ষা গ্রহন করে সে ডাক্তার হতে চায়। ফারুক সকলের কাছে দোয়া ও সহযোগীতা চায়।

দাউদকান্দিতে সড়ক দুর্ঘটনায় সাংবাদিকসহ ২৫ জন আহত

দরঘটনশামীমা সুলতানাঃ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দাউদকান্দির ইলিয়টগঞ্জের পুটিয়ায় বাস ও মাইক্রোবাস খাদে পড়ে সাংবাদিকসহ ২৫ জন আহত হয়েছে। ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশের উপ-পরিদর্শক মোহাম্মদ মারুফ জানান, শনিবার রাত ১১টায় মহাসড়কের ইলিয়টগঞ্জের পুটিয়ায় ঢাকাগামী একটি এশিয়ালাইন বাস ও মাইক্রোবাস খাদে পড়ে প্রায় ২০/২৫ জন যাত্রী আহত হয়।

আহতদের মধ্যে বাংলাভিশন টিভির সংবাদ পাঠক মোঃ আলমগীরের একটি পা ভেঙ্গে যায়। দাউদকান্দি মডেল থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে সাংবাদিক আলমগীরকে উদ্ধার করে গৌরীপুর হাসপাতালে পৌঁছান।

গৌরীপুর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা পাঠানো হয়। আহত যাত্রীদের গৌরীপুর হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে ঢাকা ও কুমিল্লায় নিয়ে যাওয়া হয়।

এদিকে সড়ক দুঘর্টনায় বাংলাভিশন টিভির সংবাদ পাঠক মোঃ আলমগীর আহত হওয়ায় দাউদকান্দিতে কর্মরত সাংবাদিকরা গভীর দুঃখ প্রকাশ করে তার সুস্থতা কামনা করেছেন।

হোমনা সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের সাফল্যে আনন্দ মিছিল

11cbHomngssgমোর্শেদুল ইসলাম শাজু: সদ্য প্রকাশিত এসএসসি পরীক্ষায় কুমিল্লা বোর্ডে হোমনা সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় ১৮তম স্থান অধিকার করায় বিদ্যালয়টির ছাত্র-শিক্ষকমন্ডলী একটি আনন্দ মিছিল বের করে।

সোমবার মিছিলটি বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হয়ে উপজেলা সদরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে বিদ্যালয়ে ফিরে যায়। এসময় ছাত্রদের হাতে বিদ্যালয়ের সাফল্যের সংক্ষিপ্ত বিভিন্ন তথ্য সংবলিত প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করে বর্ণাঢ্য মিছিলটির নেতৃত্ব দেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. কাইয়ূম মারুফ। আনন্দ র‌্যালিতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে শত শত ছাত্র অংশ নেন।

 বিদ্যালয়ের ধারবাহিক সাফল্যের জন্য ছাত্রদের কঠোর অধ্যাবসায় ও শিক্ষকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণ আর অভিভাবকদের সচেতনতা ও অকুণ্ঠ সমর্থনই ছাত্রদের ধারবাহিক সাফল্যের মূল কারণ বললেন প্রধান শিক্ষক মে. কাইয়ূম মারুফ।

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের প্রকাশিত এসএসসি পরীক্ষায় হোমনা সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ৩১টি এ প্লাস সহ শতভাগ পাশের ধারা অব্যাহত রয়েছে। বিদ্যালয়টি থেকে সর্ব মোট ৫৭ জন ছাত্রের মধ্যে বিজ্ঞান শাখায় ২৭জন অংশগ্রহণ করে ২০টি এ প্লাস এবং বাণিজ্য শাখায় ৩০ জনের মধ্যে ১১টি এ প্লাসসহ শতভাগ পাশের রেকর্ড অর্জন করে। এদের মধ্যে ৯টি গোল্ডেল প্লাস রয়েছে।

চৌদ্দগ্রামে হরতালের পক্ষে-বিপক্ষে মিছিল

Horrtalমোঃ এমদাদ উল্যাহ: মঙ্গলবারের হরতাল পক্ষে -বিপক্ষে চৌদ্দগ্রামে জামায়াত ও আ’লীগের পাল্টাপাল্টি মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। জানা গেছে, জামায়াতে ইসলামী নায়েবে আমীর মাওলানা একেএম ইউসুফকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে জামায়াতের ডাকা মঙ্গলবারের সকাল-সন্ধ্যা হরতালের সমর্থনে নেতাকর্মীরা মহাসড়কের আটগ্রাম, বাতিসা ও মিয়াবাজার এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করে। আটগ্রামে মিছিলে নেতৃত্ব দেন শিবিরের উপজেলা সেক্রেটারী আলী হোসেন ও পৌর সেক্রেটারী জাহাঙ্গীর হোসেন প্রমুখ। পরে পুলিশ এক পথচারীকে গ্রেফতার করে।  

অপরদিকে এ হরতালকে নৈরাজ্যকর দাবি করে বিপক্ষে বিক্ষোভ মিছিল করেছে পৌর আ’লীগ। মিছিলে নেতৃত্ব দেন পৌর যুবলীগ সভাপতি আবদুল হক, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইদ্রিছ মিয়াজী, যুবলীগ নেতা পরাশ উদ্দিন রিপন, ইউনুছ মিয়া, আবদুল হালিম, নজির আহমদ, উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম, মোশারফ হোসেন প্রমুখ।